পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বলতে পৃথিবীর চারপাশে ঘিরে থাকা গ্যাসসমূহের একটি স্তরকে বোঝায়, যা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে স্থিতিশীল থাকে। এটি সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে পৃথিবীতে জীবের সুরক্ষা প্রদান করে এবং গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে তাপ ধরে রাখে, যা পৃথিবীর তাপমাত্রাকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে।[]

বায়ুমণ্ডলে নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি বিক্ষিপ্ত হয় বলে পৃথিবীকে নীল আলো প্রদান করে যা দেখা হয়েছিল মহাশূন্যের অবস্থিত আইএসএস থেকে যা ৪০২–৪২৪ কিলোমিটার উপরে।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গঠন পরিমাণ অনুসারে। নিচের পাই চার্টটি সন্ধান পাওয়া গ্যাস সমূহের দ্বারা ০.০৩৮% বায়ুমণ্ডল গঠিত তা প্রকাশ করছে। এই পরিমাণ বিভিন্ন বছর থেকে সংগৃহীত (প্রধানত কার্বন ডাই-অক্সাইড ১৯৮৭ সালে এবং মিথেন ২০০৯ সালে) এবং কোন একক উৎস নির্দেশ করে না বললেই চলে।

বায়ুমণ্ডলের মূল গ্যাসসমূহ হল:

  • ৭৮.০৯% নাইট্রোজেন
  • ২০.৯৫% অক্সিজেন
  • ০.৯৩% আর্গন
  • ০.০৩% কার্বন ডাইঅক্সাইড

এছাড়াও বায়ুমণ্ডলে সামান্য পরিমাণে অন্যান্য গ্যাস এবং জলীয় বাষ্প উপস্থিত থাকে, যার গড় পরিমাণ প্রায় ১%। উচ্চতার সাথে বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব কমতে থাকে, এবং মহাশূন্যের সাথে এর সরাসরি কোনো সুনির্দিষ্ট সীমা নেই। সাধারণত, ১০০ কিলোমিটার (৬২ মাইল) উচ্চতায় কারম্যান রেখাকে বায়ুমণ্ডল এবং মহাশূন্যের সীমানা হিসেবে ধরা হয়।

বায়ুমণ্ডলের স্তরসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  1. ট্রপোস্ফিয়ার: যেখানে আবহাওয়া এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাসসমূহ বিদ্যমান।
  2. স্ট্রাটোস্ফিয়ার: যেখানে ওজোন স্তর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে।
  3. মেসোস্ফিয়ার: উল্কাগুলোর বেশিরভাগ এখানে পুড়ে যায়।
  4. থার্মোস্ফিয়ার: যেখানে মহাকাশযানগুলির চলাচল ঘটে।
  5. এক্সোস্ফিয়ার: বায়ুমণ্ডলের শেষ স্তর, যা মহাশূন্যের সাথে মিলিত হয়।

বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞান বা "অ্যাইরলজি" বায়ুমণ্ডলের গঠন, প্রক্রিয়া এবং এর প্রভাব নিয়ে চর্চা করে। লিওন টিইসারিয়েক ডি বর্ট এবং রিচার্ড অ্যাসম্যান এই শাস্ত্রের প্রথম দিকের অগ্রণী গবেষক ছিলেন, যারা বায়ুমণ্ডলের গঠন ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।[]

বায়ুমণ্ডলের সংযুক্তি

সম্পাদনা
 
বায়ুমণ্ডলীয় জলীয় বাষ্পের গড়

বায়ু বা বাতাস প্রধানত তিনটি প্রধান গ্যাস দ্বারা গঠিত: নাইট্রোজেন (৭৮%), অক্সিজেন (২১%), এবং আর্গন (০.৯৩%)। এই গ্যাসসমূহের সাথে আরও কিছু ক্ষুদ্র পরিমাণের গ্যাস মিশ্রিত থাকে যা বায়ুমণ্ডলের অবশিষ্ট অংশ গঠন করে। জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলের ভরের প্রায় ০.২৫% নিয়ে থাকে, এবং এর পরিমাণ স্থান এবং তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। শীতল এলাকায় জলীয় বাষ্পের ঘনত্ব খুব কম (প্রায় ১০ পিপিএমভি), যেখানে উষ্ণ এলাকায় এটি ৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।[]

অন্য যেসব গ্যাস খুবই অল্প পরিমাণে বিদ্যমান থাকে তাদের ট্রেস গ্যাস বলা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গ্রিনহাউজ গ্যাস, যেমন কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO₂), মিথেন (CH₄), নাইট্রাস অক্সাইড (N₂O), এবং ওজোন (O₃)। এগুলো পৃথিবীর জলবায়ুর ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে।[]

বায়ুমণ্ডলে অনেক ক্ষুদ্র রাসায়নিক যৌগও পাওয়া যায়, যেমন প্রাকৃতিক উৎস থেকে উৎপন্ন খনিজ কণা, জৈব উপাদান, পরাগ রেণু, আগ্নেয়গিরির ছাই, এবং সাগরের স্প্রে। এছাড়া শিল্প কলকারখানা থেকে নির্গত বিভিন্ন দূষণ যেমন ক্লোরিন, ফ্লোরিন যৌগ, এবং পারদ বাষ্প বাতাসে মিশ্রিত হতে পারে। সালফার যৌগ, যেমন হাইড্রোজেন সালফাইড (H₂S) এবং সালফার ডাইঅক্সাইড (SO₂), প্রাকৃতিক উৎস বা শিল্প থেকে বাতাসে মিশতে পারে, যা পরিবেশ দূষণের প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচিত।

শুষ্ক বায়ুমণ্ডল গঠন পরিমাণ অনুসারে[]
পিপিএমভি: প্রতি মিলিয়নে কণা পরিমাণ অনুসারে (note: volume fraction is equal to mole fraction for ideal gas only, see volume (thermodynamics))
গ্যাস পরিমাণ
নাইট্রোজেন (N2) ৭৮০,৮৪০ পিপিএমভি (৭৮.০৮৪%)
অক্সিজেন (O2) ২০৯,৪৬০ পিপিএমভি (২০.৯৪৬%)
আর্গন (Ar) ৯,৩৪০ পিপিএমভি (০.৯৩৪০%)
কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) ৩৯৭ পিপিএমভি (০.০৩৯৭%)
নিয়ন (Ne) ১৮.১৮ পিপিএমভি (০.০০১৮১৮%)
হিলিয়াম (He) ৫.২৪ পিপিএমভি (০.০০০৫২৪%)
মিথেন (CH4) ১.৭৯ পিপিএমভি (০.০০০১৭৯%)
ক্রিপ্টন (Kr) ১.১৪ পিপিএমভি (০.০০০১১৪%)
হাইড্রোজেন (H2) ০.৫৫ পিপিএমভি (০.০০০০৫৫%)
নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) ০.৩২৫ পিপিএমভি (০.০০০০৩২৫%)
কার্বন মনোক্সাইড (CO) ০.১ পিপিএমভি (০.০০০০১%)
জেনন (Xe) ০.০৯ পিপিএমভি (৯×১০−৬%) (০.০০০০০৯%)
ওজোন (O3) ০.০ to ০.০৭ পিপিএমভি (০ থেকে ৭×১০−৬%)
নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO2) ০.০২ পিপিএমভি (২×১০−৬%) (০.০০০০০২%)
আয়োডিন (I2) ০.০১ পিপিএমভি (১×১০−৬%) (০.০০০০০১%)
অ্যামোনিয়া (NH3) ট্রেস গ্যাস
উপর্যুক্ত শুষ্ক বায়ুমণ্ডলে বিদ্যমান না:
জলীয় বাষ্প (H2O) ~০.২৫% সম্পূর্ণ বায়ুমণ্ডলের ভর দ্বারা, স্থানীয়ভাবে ০.০০১%–৫% []

বায়ুমণ্ডলের গঠন

সম্পাদনা
 
বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস[]

প্রধান স্তরসমূহ

সম্পাদনা

সাধারণত বায়ুমণ্ডলের উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বায়ু চাপ এবং ঘনত্ব হ্রাস পায়। কিন্তু,তাপমাত্রার সঙ্গে উচ্চতায় আরো জটিল সমীকরণ আছে এবং কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে স্থির বা এমনকি বৃদ্ধি পেতে পারে উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে। তাপমাত্রা ও উচ্চতার সাধারণ পরিলেখ ধ্রুবক এবং বেলুন সাউন্ডিং দ্বারা চেনা যায়। তাপমাত্রার এই আচরণ দ্বারা বায়ুমণ্ডলীয় স্তর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা যায়। এই ভাবে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল পাঁচটি প্রধান স্তরে (একে বায়ুমণ্ডলীয় স্তরবিন্যাস বলা হয়) ভাগ করা যায়। সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন পর্যন্ত এই স্তরগুলো হচ্ছেঃ

  • ট্রপোমণ্ডল: ভূপৃষ্ঠ থেকে ১২/১৮ কিলোমিটার (০ থেকে ৭/৯ মাইল)[]
  • স্ট্র্যাটোমণ্ডল: ১২/১৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার (৭/৯ থেকে ৩১ মাইল)
  • মেসোমণ্ডল: ৫০ থেকে ৮০ কিলোমিটার (৩১ থেকে ৫০ মাইল)
  • তাপমণ্ডলঃ ৮০ থেকে ৭০০ কিলোমিটার (৫০ থেকে ৪৪০ মাইল)[]
  • এক্সোমণ্ডল: > ৭০০ কিলোমিটার (>৪৪০ মাইল)
  • ম্যাগনেটোমণ্ডল

ট্রপোমণ্ডল

সম্পাদনা

ট্রপোমণ্ডল বা ক্ষুব্ধমণ্ডল ভূপৃষ্ঠ থেকে শুরু হয় এবং প্রায় ১১-১৫ কিলোমিটার উচ্চতায় ট্রপোবিরতি পর্যন্ত বিস্তৃত,যদিও এই উচ্চতার তারতম্য ঘটে আবহাওয়ার কারণে যা মেরুতে প্রায় ৯ কিলোমিটার (৩০,০০০ ফুট) এবং বিষুবরেখায় প্রায় ১৭ কিলোমিটার (৫৬,০০০ ফুট)। [] তবে নিরক্ষীয় অঞ্চলে ১৮ কিমি হলেও মেরু অঞ্চলে ইহা ৮১ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদানের প্রায় ৭৬% এবং সমস্ত প্রকার জলীয় বাষ্প ও ধূলিকণা এই স্তরেই দেখতে পাওয়া যায়। মেঘ, বৃষ্টি, বজ্রপাত, ঝড়, শিশির, কুয়াশা সহ সমস্ত প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই স্তরেই দেখা যায় বলে একে ক্ষুব্ধমণ্ডল বলে। ট্রপোমণ্ডল সবচেয়ে বেশি উওপ্ত হয় ভূপৃষ্ঠ কর্তৃক বিকিরিত তাপশক্তি দ্বারা,তাই সাধারণত ট্রপোমণ্ডল সর্বনিম্ন অংশ উষ্ণ এবং উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে তাপমাত্রা হ্রাস পায়। মূলত সমস্ত আবহাওয়ার উপাদান যেমন মেঘ ইত্যাদিসহ ট্রপোমণ্ডল বায়ুমণ্ডলের ভরের প্রায় ৮০% ধারণ করে। [১০] ট্রপোবিরতি হচ্ছে ট্রপোমণ্ডল ও স্ট্রাটোমণ্ডলের মধ্যে সীমারেখা স্বরূপ। এই স্তরে ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা হ্রাস পায়। এই তাপমাত্রা হ্রাসের হার সাধারণভাবে প্রতি ১০০ মিটার উচ্চতায় ০.১° সেন্টিগ্রেড বা প্রতি ১০০০ মিটার (১ কিমি) উচ্চতায় ৬.৫° সেন্টিগ্রেড। ট্রপোমণ্ডল ও স্ট্র্যাটোমণ্ডল এর মধ্যবর্তী অঞ্চল ট্রপোপজ নামে পরিচিত।

 
একটি স্পেস শাটল মহাকাশযান স্ট্রাটমণ্ডল এবং মেসোমণ্ডল অতিক্রম করতে দেখা যাচ্ছে. কমলা স্তরটি হচ্ছে ট্রপোমণ্ডল, সাদাটে স্তরটি হচ্ছে স্ট্রাটোমণ্ডল এবং তারপর নীল স্তরটি হচ্ছে মেসোমণ্ডল[১১]

স্ট্র্যাটোমণ্ডল

সম্পাদনা

স্ট্রাটোমণ্ডল বা শান্তমণ্ডল অঞ্চল পৃথিবী থেকে ১২/১৫ কিলোমিটার (৭.৫/৯.৩ মাইল, ৩৯,০০০/৪৯,১০৪ ফুট) উপরে ট্রপোবিরতি হতে শুরু হয়ে স্ট্র্যাটোবিরতি পর্যন্ত ৫০ থেকে ৫৫ (৩১-৩৪ মাইল; ১৬০,০০০- ১৮০,০০০ ফুট) কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। স্ট্রাটমণ্ডলে শীর্ষে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ সমুদ্র পৃষ্ঠের ১০০০ ভাগের এক। ওজোন স্তর দ্বারা অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ শোষণ বৃদ্ধির কারণে উচ্চতার সঙ্গে সঙ্গে এই স্তরের তাপমাত্রা বাড়ে। ট্রপোবিরতিতে তাপমাত্রা -৬০° সেলসিয়াস হতে পারে (-৭৬° ফাঃ; ২১০ কেলভিন),স্ট্রাটোমণ্ডলে উপরে অনেক গরম। [১২] ঝড় বৃষ্টি থাকে না বলেই এই স্তরের মধ্য দিয়ে সাধারণত বিমান চলাচল করে। বায়ুপ্রবাহ থাকে না বলে জেট বিমানের ইঞ্জিনের ধোঁয়া পুঞ্জাকারে সাদা দাগের আকারে দেখা যায়। এই স্তরে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। এই স্তরে ওজোন গ্যাসের স্তর বেশি পরিমাণে দেখা যায়। স্ট স্ট্র্যাটোমণ্ডল ও মেসোমণ্ডলের মধ্যবর্তী অঞ্চলকে স্ট্রেটোবিরতি বলে।

মেসোমণ্ডল

সম্পাদনা

মেসোমণ্ডল সমুদ্রপৃষ্ঠ ৫০ কিলোমিটার (১৬০,০০০ ফিট ৩১ মাইল) উপরে স্ট্র্যাটোবিরতি থেকে শুরু হয়ে মেসোবিরতি পর্যন্ত প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ (৫০-৫৩ মাইল; ২৬০০০০-২৮০০০০ ফুট) কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। উল্কাপিন্ড সাধারণত ৭৬ কিমি থেকে ১০০ কিমি এর মধ্যে উচ্চতায় মেসোমণ্ডল দেখা যায়। তাপমাত্রা মেসোমণ্ডলে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস যায়। মেসোমণ্ডলের উপরে অবস্থিত মেসোবিরতিতে তাপমাত্রা এত হ্রাস পায় যে এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থান এবং ঐ স্থানের গড় তাপমাত্রা প্রায় -৮৫° সেলসিয়াস (-১২০° ফাঃ, ১৯০ কেলভিন)। [১৩] এই উচ্চতায় তাপমাত্রা -১০০° সেলসিয়াস (-১৫০° ফাঃ; ১৭০ কেলভিন) পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। [১৪] এই স্তরের ঠাণ্ডা তাপমাত্রার কারণে জলীয় বাষ্প জমাট বাঁধে। মেসোমণ্ডলের ওপরে তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়া থেমে যায়। এই স্তরকে মেসোবিরতি বলে।

তাপমণ্ডল

সম্পাদনা

তাপমণ্ডল প্রায় ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল;২৬০.০০০ ফুট) উপরে অবস্থিত এবং মেসোবিরতি থেকে তাপবিরতি পর্যন্ত এই স্তরের তাপমাত্রা উচ্চতা বৃদ্ধি সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে যা এক্সোমণ্ডলে প্রবেশ করলে উচ্চতার সঙ্গে সঙ্গে ধ্রুবক হয়। যেহেতু থার্মোবিরতি এক্সোমণ্ডল নিচে অবস্থিত তাই একে এক্সোবেসও বলা হয়। এর গড় উচ্চতা পৃথিবী থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সৌর ক্রিয়া ও ব্যাপ্তি সঙ্গে পরিবর্তিত হয় ৫০০ থেকে ১০০০ (৩১০-৬২০ মাইল; ১৬০০০০০-৩৩০০০০০ ফুট) কিলোমিটার পর্যন্ত। [] এই স্তরের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ১,৫০০° সেলসিয়াস (২,৭০০° ফাঃ) পর্যন্ত হয়। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন এর কক্ষপথ এই স্তরের ৩২০ থেকে ৩৮০ কিলোমিটারের (২০০ এবং ২৪০ মাইল) মধ্যে অবস্থিত। ভূপৃষ্ঠ থেকে পাঠানো বেতার তরঙ্গ আয়নোমণ্ডলের বিভিন্ন আয়নে বাধা পেয়ে পুনরায় ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে। ফলে পৃথিবীতে বেতার সংযোগ রক্ষা করা সম্ভব হয়। এই স্তরে বিভিন্ন তড়িতাহত অণুর চৌম্বক বিক্ষেপের ফলে অণুগুলি প্রোটন ও ইলেকট্রনের সংস্পর্শে উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে একপ্রকার উজ্জ্বল আলোক বিচ্ছুরণ দেখা যায়, একে মেরুজ্যোতি বলে। সুমেরু অঞ্চলের মেরুজ্যোতিকে সুমেরু প্রভা বা অরোরা বোরিয়ালিস এবং কুমেরু অঞ্চলের মেরুজ্যোতিকে কুমেরু প্রভা বা অরোরা অস্ট্রালিস বলে।

এক্সোমণ্ডল

সম্পাদনা

এক্সোমণ্ডল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে দূরবর্তী স্তর, এক্সোবেস থেকে শুরু হয়ে ৭০০ কিলোমিটার উপরে বিস্তৃত এবং সমুদ্রতল হতে প্রায় চাঁদের দূরত্বের অর্ধেক পথ। এটি প্রধানত হাইড্রোজেন, হিলিয়াম এবং কিছু ভারী অণুসমূহ যেমন নাইট্রোজেন, অক্সিজেন এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড দিয়ে গঠিত। এই অণু ও পরমাণুসমূহ পরস্পর থেকে এত দূরে থাকে যে একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় না ফলে বায়ুমণ্ডল আর গ্যাস হিসাবে আচরণ করে না। এই সকল মুক্ত ভ্রমণরত কণা সমূহ নিক্ষিপ্ত বস্তুর নির্দিষ্ট আবক্র পথ অনুসরণ করে। এই স্তরে বায়ু খুবই হালকা। এই স্তরেও উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। এই স্তরে হিলিয়ামহাইড্রোজেন গ্যাসের প্রাধান্য দেখা যায়।

ম্যাগনেটোমণ্ডল

সম্পাদনা

এক্সোমণ্ডলের ওপরে বায়ুমণ্ডলের কোশ সীমা পর্যন্ত বায়ুস্তরকে ম্যাগনেটোমণ্ডল বলে। এই স্তরে বায়ুমণ্ডলকে বেষ্টন করে একটি প্রোটন ও ইলেকট্রনের চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। এই স্তর সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বিবর্তন

সম্পাদনা

প্রাচীনতম বায়ুমণ্ডল

সম্পাদনা

প্রথম বায়ুমণ্ডলে সৌর নীহারিকাতে গ্যাস ছিল, প্রধানত হাইড্রোজেন। সম্ভবত সাধারণ হাইড্রাইড ছিল যেমন এখন গ্যাস দৈত্যদের (বৃহস্পতি এবং শনি) মধ্যে পাওয়া যায়, বিশেষ করে জলীয় বাষ্প, মিথেন এবং অ্যামোনিয়া। [১৫]

দ্বিতীয় বায়ুমণ্ডল

সম্পাদনা

আগ্নেয়গিরি থেকে আউটগ্যাসিং, বিশাল গ্রহাণু দ্বারা পৃথিবীতে দেরীতে ভারী বোমাবর্ষণের সময় উৎপাদিত গ্যাস দ্বারা সম্পূরক, পরবর্তী বায়ুমণ্ডল তৈরি করে, যার মধ্যে মূলত নাইট্রোজেন প্লাস কার্বন ডাই অক্সাইড এবং জড় গ্যাস রয়েছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনের একটি বড় অংশ জলে দ্রবীভূত হয় এবং ভূত্বক শিলাগুলির আবহাওয়ার সময় ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো ধাতু গুলির সাথে বিক্রিয়া করে কার্বনেট তৈরি করে যা পলি হিসাবে জমা হয়েছিল। ৩.৮ বিলিয়ন বছর আগের তারিখ থেকে জল-সম্পর্কিত পলি পাওয়া গেছে।

প্রায় ৩.৪ বিলিয়ন বছর আগে, নাইট্রোজেন তখনকার স্থিতিশীল "দ্বিতীয় বায়ুমণ্ডল" এর প্রধান অংশ গঠন করেছিল। বায়ুমণ্ডলের ইতিহাসে জীবনের প্রভাবকে খুব শীঘ্রই বিবেচনা করতে হবে কারণ প্রাথমিক জীবন-রূপের ইঙ্গিতগুলি ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে প্রদর্শিত হয়। সেই সময়ে পৃথিবী কীভাবে তরল জল এবং জীবনের জন্য যথেষ্ট উষ্ণ জলবায়ু বজায় রেখেছিল, যদি প্রারম্ভিক সূর্য আজকের চেয়ে 30% কম সৌর উজ্জ্বলতা প্রকাশ করে তবে এটি "অস্পষ্ট তরুণ সূর্য প্যারাডক্স" নামে পরিচিত একটি ধাঁধা।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Zimmer, Carl (৩ অক্টোবর ২০১৩)। "পৃথিবীর অক্সিজেন: একটি রহস্য যা গ্রহণ করার জন্য সহজ"New York Times। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৩ 
  2. [১] সৌরমণ্ডলের মধ্যে অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ By Manuel Vázquez, Arnold Hanslmeier
  3. Wallace, John M. and Peter V. Hobbs.বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞান; একটি প্রাথমিক জরিপ.Elsevier. দ্বিতীয় সংস্করণ, ২০০৬. ISBN 13:978-0-12-732951-2. Chapter 1
  4. "Trace Gases"। Ace.mmu.ac.uk। ২০১০-১০-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১০-১৬ 
  5. Source for figures: কার্বন ডাইঅক্সাইড, NOAA আর্থ সিস্টেম রিসার্চ ল্যাবরেটরি, (updated 2013-03). মিথেন, IPCC TAR table 6.1 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ জুন ২০০৭ তারিখে, (updated to 1998). The NASA total was 17 ppmv over 100%, and CO2 was increased here by 15 ppmv. To normalize, N2 should be reduced by about 25 ppmv and O2 by about 7 ppmv.
  6. ভূগোল ও পরিবেশ (নবম-দশম শ্রেণী)। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠপুস্তক বোর্ড, ঢাকা। অক্টোবর, ২০১২। পৃষ্ঠা ৬৫।  Authors list-এ |প্রথমাংশ1= এর |শেষাংশ1= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ2= এর |শেষাংশ2= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ3= এর |শেষাংশ3= নেই (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  7. "ট্রপোমণ্ডলের উচ্চতা"। Das.uwyo.edu। ২০২০-০৪-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৪-১৮ 
  8. Randy Russell। "তাপমণ্ডল"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১০-১৮  অজানা প্যারামিটার |সাল= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  9. "ট্রপোবিরতির উচ্চতা"। Das.uwyo.edu। ২০২০-০৪-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৪-১৮ 
  10. মেকগ্রাও হিলের সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এনসাইক্লোপিডিয়া. (1984). ট্রপোমণ্ডল। "এটা সম্পূর্ণ বায়ুমণ্ডলের ভরের প্রায় পাঁচ ভাগের চার ধারণ করে।"
  11. "ISS022-E-062672 caption"। NASA। ১৯ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০১২ 
  12. বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞান পত্রিকা (১৯৯৩)। "স্ট্র্যাটোমণ্ডল"। ২০১৩-১০-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১০-১৮ 
  13. States, Robert J.; Gardner, Chester S. (২০০০)। "মেসোবিরতি অঞ্চলের তাপীয় গঠন(৮০–১০৫ কিলোমিটার) at 40°N Latitude. Part I: Seasonal Variations"। বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞান পত্রিকা ২০০০57: 66–77। ডিওআই:10.1175/1520-0469(2000)057<0066:TSOTMR>2.0.CO;2বিবকোড:2000JAtS...57...66S  অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  14. Joe Buchdahl। "Atmosphere, Climate & Environment Information Programme"। Ace.mmu.ac.uk। ২০১০-০৭-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৪-১৮ 
  15. Zahnle, K.; Schaefer, L.; Fegley, B. (২০১০)। "Earth's Earliest Atmospheres"Cold Spring Harbor Perspectives in Biology2 (10): a004895। ডিওআই:10.1101/cshperspect.a004895পিএমআইডি 20573713পিএমসি 2944365