বিষয়বস্তুতে চলুন

সুন্দরবন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

স্থানাঙ্ক: ২১°৫৭′ উত্তর ৮৯°০৫′ পূর্ব / ২১.৯৫০° উত্তর ৮৯.০৮৩° পূর্ব / 21.950; 89.083
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
OrangKalideres (আলোচনা | অবদান)
58.145.186.204 (আলাপ)-এর করা সম্পাদনাগুলি বাতিল করে MdsShakil-এর করা সর্বশেষ সংস্করণে ফেরত: ধ্বংসাত্মক সম্পাদনা বাতিল
ট্যাগ: পূর্বাবস্থায় ফেরত এসডাব্লিউভিউয়ার [১.৬]
 
(২৩ জন ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ২৮টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
৩ নং লাইন: ৩ নং লাইন:
| name = সুন্দরবন
| name = সুন্দরবন
| iucn_category =
| iucn_category =
| photo = Sun in Sunderbans.jpg
| photo = Save the sundarbans 20.jpg
| photo_alt =
| photo_alt =
| photo_caption = সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
| photo_caption = সুন্দরবনের অভ্যন্তর
| photo_width =
| photo_width =
| map = বাংলাদেশ#ভারত পশ্চিমবঙ্গ#ভারত#এশিয়া#পৃথিবী
| map = বাংলাদেশ#ভারত পশ্চিমবঙ্গ#ভারত#এশিয়া#পৃথিবী
১২ নং লাইন: ১২ নং লাইন:
| map_width =
| map_width =
| location = [[খুলনা বিভাগ]], বাংলাদেশ<br /> [[পশ্চিমবঙ্গ]] , ভারত
| location = [[খুলনা বিভাগ]], বাংলাদেশ<br /> [[পশ্চিমবঙ্গ]] , ভারত
| nearest_city = [[খুলনা]], [[কলকাতা]], [[সাতক্ষীরা]], [[বাগেরহাট]], [[পটুয়াখালী]], [[কাকদ্বীপ]], ও [[ক্যানিং, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা|ক্যানিং]]
| nearest_city = [[খুলনা]], [[কলকাতা]], [[সাতক্ষীরা]], [[বাগেরহাট]], [[কাকদ্বীপ]], ও [[ক্যানিং, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা|ক্যানিং]]
| coordinates = {{স্থানাঙ্ক|21|57|N|89|05|E|region:BD|display=inline,title}}
| coordinates = {{স্থানাঙ্ক|21|57|N|89|05|E|region:BD|display=inline,title}}
| area = {{রূপান্তর|139500|ha|acre|abbr=on}}
| area = {{রূপান্তর|139500|ha|acre|abbr=on}}
৩৮ নং লাইন: ৩৮ নং লাইন:
}}
}}
}}
}}
'''সুন্দরবন''' হলো [[বঙ্গোপসাগর]] উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত [[বনভূমি]] যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম। [[পদ্মা]], [[মেঘনা]] ও [[ব্রহ্মপুত্র]] নদীত্রয়ের অববাহিকার [[বদ্বীপ]] এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ [[বনভূমি]] [[বাংলাদেশ]]ের [[খুলনা]], [[সাতক্ষীরা]] ও [[বাগেরহাট]] জেলার কিছু অংশ এবং [[ভারত]]ের [[পশ্চিমবঙ্গ]] রাজ্যের দুই জেলা [[উত্তর চব্বিশ পরগনা]] ও [[দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা]] জুড়ে বিস্তৃত।<ref>Pani, D. R.; Sarangi, S. K.; Subudhi, H. N.; Misra, R. C.; Bhandari, D. C. (2013). "[https://www.researchgate.net/profile/Dilip_Kundu2/post/What_are_the_rice_varieties_that_show_salt_tolerance_naturally/attachment/59d6397779197b8077996ae6/AS%3A401904459894785%401472832898899/download/Art+9+Pani+et+al..pdf Exploration, evaluation and conservation of salt tolerant rice genetic resources from Sundarbans region of West Bengal]" (PDF). ''Journal of the Indian Society of Coastal Agricultural Research''. '''30''' (1): 45–53.</ref> সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় [[ম্যানগ্রোভ]] বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি।<ref name="Bpedia">{{বাংলাপিডিয়া উদ্ধৃতি|অধ্যায়=সুন্দরবন|লেখক=নিয়াজ আহমদ সিদ্দিকী}}</ref> ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার (৬৬%)<ref name="P.Alo">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=সুন্দরবনের হারানো মাছ |লেখক=খসরু চৌধুরী |ইউআরএল=http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-23/news/80773 |বিন্যাস=ওয়েব |সংবাদপত্র=দৈনিক প্রথম আলো |অবস্থান=ঢাকা |তারিখ=২৩ জুলাই ২০১০ |পাতা=২৫ |পাতাসমূহ= |সংগ্রহের-তারিখ=জুলাই ২৪, ২০১০ |ভাষা=বাংলা }}{{অকার্যকর সংযোগ|তারিখ=সেপ্টেম্বর ২০২১ |bot=InternetArchiveBot |ঠিক করার প্রচেষ্টা=yes }}</ref> রয়েছে বাংলাদেশে<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=Sundarbans Tiger Project<!-- Bot generated title --> |ইউআরএল=http://www.sundarbantigerproject.info/viewpage.php?page_id=3 |সংগ্রহের-তারিখ=১ মে ২০০৮ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20080520112911/http://www.sundarbantigerproject.info/viewpage.php?page_id=3 |আর্কাইভের-তারিখ=২০ মে ২০০৮ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref> এবং বাকি অংশ (৩৪%) রয়েছে ভারতের মধ্যে।
'''''সুন্দরবন''''' হলো [[বঙ্গোপসাগর]] উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত [[বনভূমি]] যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম। [[পদ্মা]], [[মেঘনা]] ও [[ব্রহ্মপুত্র]] নদীত্রয়ের অববাহিকার [[বদ্বীপ]] এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ [[বনভূমি]] [[বাংলাদেশ]]ের [[খুলনা]], [[সাতক্ষীরা]] ও [[বাগেরহাট]] জেলার কিছু অংশ এবং [[ভারত]]ের [[পশ্চিমবঙ্গ]] রাজ্যের দুই জেলা [[উত্তর চব্বিশ পরগনা]] ও [[দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা]] জুড়ে বিস্তৃত।<ref>Pani, D. R.; Sarangi, S. K.; Subudhi, H. N.; Misra, R. C.; Bhandari, D. C. (2013). "[https://www.researchgate.net/profile/Dilip_Kundu2/post/What_are_the_rice_varieties_that_show_salt_tolerance_naturally/attachment/59d6397779197b8077996ae6/AS%3A401904459894785%401472832898899/download/Art+9+Pani+et+al..pdf Exploration, evaluation and conservation of salt tolerant rice genetic resources from Sundarbans region of West Bengal]" (PDF). ''Journal of the Indian Society of Coastal Agricultural Research''. '''30''' (1): 45–53.</ref> সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় [[ম্যানগ্রোভ]] বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি।<ref name="Bpedia">{{বাংলাপিডিয়া উদ্ধৃতি|অধ্যায়=সুন্দরবন|লেখক=নিয়াজ আহমদ সিদ্দিকী}}</ref> ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার (৬৬%)<ref name="P.Alo">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=সুন্দরবনের হারানো মাছ |লেখক=খসরু চৌধুরী |ইউআরএল=http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-23/news/80773 |বিন্যাস=ওয়েব |সংবাদপত্র=দৈনিক প্রথম আলো |অবস্থান=ঢাকা |তারিখ=২৩ জুলাই ২০১০ |পাতা=২৫ |পাতাসমূহ= |সংগ্রহের-তারিখ=জুলাই ২৪, ২০১০ |ভাষা=বাংলা }}{{অকার্যকর সংযোগ|তারিখ=সেপ্টেম্বর ২০২১ |bot=InternetArchiveBot |ঠিক করার প্রচেষ্টা=yes }}</ref> রয়েছে বাংলাদেশে<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=Sundarbans Tiger Project<!-- Bot generated title --> |ইউআরএল=http://www.sundarbantigerproject.info/viewpage.php?page_id=3 |সংগ্রহের-তারিখ=১ মে ২০০৮ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20080520112911/http://www.sundarbantigerproject.info/viewpage.php?page_id=3 |আর্কাইভের-তারিখ=২০ মে ২০০৮ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref> এবং বাকি অংশ (৩৪%) রয়েছে ভারতের মধ্যে।


সুন্দরবন ৬ ডিসেম্বর ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে [[ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান]] হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।<ref>{{সাময়িকী উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.sciencedirect.com/science/article/abs/pii/S0272771407000029|শিরোনাম=Monitoring mangrove forest dynamics of the Sundarbans in Bangladesh and India using multi-temporal satellite data from 1973 to 2000|তারিখ=2007-06-01|সাময়িকী=Estuarine, Coastal and Shelf Science|খণ্ড=73|সংখ্যা নং=1-2|পাতাসমূহ=91–100|ভাষা=en|doi=10.1016/j.ecss.2006.12.019|issn=0272-7714}}</ref> এর বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ বস্তুত একই নিরবচ্ছিন্ন ভূমিখণ্ডের সন্নিহিত অংশ হলেও [[জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা|ইউনেস্কোর]] বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে সূচিবদ্ধ হয়েছে; যথাক্রমে 'সুন্দরবন' ও '[[সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান]]' নামে। এই সুরক্ষা সত্ত্বেও, [[আইইউসিএন লাল তালিকা|আইইউসিএন রেড লিস্ট]] অফ ইকোসিস্টেম ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে ২০২০ সালের মূল্যায়নে ভারতীয় সুন্দরবনকে বিপন্ন বলে মনে করা হয়েছিল।<ref>{{সাময়িকী উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.sciencedirect.com/science/article/abs/pii/S0006320720308090|শিরোনাম=Indian Sundarbans mangrove forest considered endangered under Red List of Ecosystems, but there is cause for optimism|তারিখ=2020-11-01|সাময়িকী=Biological Conservation|খণ্ড=251|পাতাসমূহ=108751|ভাষা=en|doi=10.1016/j.biocon.2020.108751|issn=0006-3207}}</ref> সুন্দরবনকে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা। মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ, অর্থাৎ ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা, খাঁড়ি, বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল।<ref name="P.Alo" /> বনভূমিটি, স্বনামে বিখ্যাত [[রয়েল বেঙ্গল টাইগার]] ছাড়াও নানান ধরনের পাখি, [[চিত্রা হরিণ]], [[কুমির]] ও [[সাপ]]সহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। জরিপ মোতাবেক ১০৬ বাঘ ও ১০০০০০ থেকে ১৫০০০০ চিত্রা হরিণ রয়েছে এখন সুন্দরবন এলাকায়। ১৯৯২ সালের ২১ মে সুন্দরবন [[রামসার স্থান]] হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সুন্দরবনে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসে। প্রতি বছর দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ করার মাধ্যমে প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করে।
[[সুন্দরবন]] ৬ ডিসেম্বর ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে [[ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান]] হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।<ref>{{সাময়িকী উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.sciencedirect.com/science/article/abs/pii/S0272771407000029|শিরোনাম=Monitoring mangrove forest dynamics of the Sundarbans in Bangladesh and India using multi-temporal satellite data from 1973 to 2000|তারিখ=2007-06-01|সাময়িকী=Estuarine, Coastal and Shelf Science|খণ্ড=73|সংখ্যা নং=1-2|পাতাসমূহ=91–100|ভাষা=en|doi=10.1016/j.ecss.2006.12.019|issn=0272-7714}}</ref> এর [[বাংলাদেশ]][[ভারতীয়]] অংশ বস্তুত একই নিরবচ্ছিন্ন ভূমিখণ্ডের সন্নিহিত অংশ হলেও [[জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা|ইউনেস্কোর]] বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে সূচিবদ্ধ হয়েছে; যথাক্রমে 'সুন্দরবন' ও '[[সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান]]' নামে। এই সুরক্ষা সত্ত্বেও, [[আইইউসিএন লাল তালিকা|আইইউসিএন রেড লিস্ট]] অফ ইকোসিস্টেম ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে ২০২০ সালের মূল্যায়নে ভারতীয় সুন্দরবনকে বিপন্ন বলে মনে করা হয়েছিল।<ref>{{সাময়িকী উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.sciencedirect.com/science/article/abs/pii/S0006320720308090|শিরোনাম=Indian Sundarbans mangrove forest considered endangered under Red List of Ecosystems, but there is cause for optimism|তারিখ=2020-11-01|সাময়িকী=Biological Conservation|খণ্ড=251|পাতাসমূহ=108751|ভাষা=en|doi=10.1016/j.biocon.2020.108751|issn=0006-3207}}</ref> সুন্দরবনকে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা। মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ, অর্থাৎ ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা, খাঁড়ি, বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল।<ref name="P.Alo" /> বনভূমিটি, স্বনামে বিখ্যাত [[রয়েল বেঙ্গল টাইগার]] ছাড়াও নানান ধরনের পাখি, [[চিত্রা হরিণ]], [[কুমির]] ও [[সাপ]]সহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। জরিপ মোতাবেক ১০৬ বাঘ ও ১০০০০০ থেকে ১৫০০০০ চিত্রা হরিণ রয়েছে এখন সুন্দরবন এলাকায়। ১৯৯২ সালের ২১ মে সুন্দরবন [[রামসার স্থান]] হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সুন্দরবনে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসে। প্রতি বছর দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ করার মাধ্যমে প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করে।


সর্বাধিক প্রচুর গাছের প্রজাতি হল [[সুন্দরী]] এবং [[গেওয়া]]। বনে ২৯০টি পাখি, ১২০টি মাছ, ৪২টি স্তন্যপায়ী, ৩৫টি সরীসৃপ এবং আটটি উভচর প্রজাতিসহ ৪৫৩টি বন্যপ্রাণীর বাসস্থান রয়েছে।<ref>{{সাময়িকী উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://doi.org/10.1652/1400-0350(2004)010%5B0139:MMIBAS%5D2.0.CO;2|শিরোনাম=Managing mangroves in Bangladesh: A strategy analysis|শেষাংশ=Iftekhar|প্রথমাংশ=M.S.|শেষাংশ২=Islam|প্রথমাংশ২=M.R.|তারিখ=2004|সাময়িকী=Journal of Coastal Conservation|খণ্ড=10|সংখ্যা নং=1|পাতাসমূহ=139|doi=10.1652/1400-0350(2004)010[0139:mmibas]2.0.co;2|issn=1400-0350}}</ref>
সর্বাধিক প্রচুর গাছের প্রজাতি হল [[সুন্দরী]] এবং [[গেওয়া]]। বনে ২৯০টি পাখি, ১২০টি মাছ, ৪২টি স্তন্যপায়ী, ৩৫টি সরীসৃপ এবং আটটি উভচর প্রজাতিসহ ৪৫৩টি প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বাসস্থান রয়েছে।<ref>{{সাময়িকী উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://doi.org/10.1652/1400-0350(2004)010%5B0139:MMIBAS%5D2.0.CO;2|শিরোনাম=Managing mangroves in Bangladesh: A strategy analysis|শেষাংশ=Iftekhar|প্রথমাংশ=M.S.|শেষাংশ২=Islam|প্রথমাংশ২=M.R.|তারিখ=2004|সাময়িকী=Journal of Coastal Conservation|খণ্ড=10|সংখ্যা নং=1|পাতাসমূহ=139|doi=10.1652/1400-0350(2004)010[0139:mmibas]2.0.co;2|issn=1400-0350}}</ref>


মাছ এবং কিছু অমেরুদণ্ডী প্রাণী ছাড়া অন্য বন্যপ্রাণী হত্যা বা দখলের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, মনে হচ্ছে বিংশ শতাব্দীতে হ্রাসপ্রাপ্ত জীববৈচিত্র্য বা প্রজাতির ক্ষতির একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ প্যাটার্ন রয়েছে, এবং বনের পরিবেশগত গুণমান হ্রাস পাচ্ছে।<ref>{{সাময়িকী উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://doi.org/10.1186/1746-1448-6-8|শিরোনাম=Dynamics of Sundarban estuarine ecosystem: eutrophication induced threat to mangroves|শেষাংশ=Manna|প্রথমাংশ=Suman|শেষাংশ২=Chaudhuri|প্রথমাংশ২=Kaberi|শেষাংশ৩=Bhattacharyya|প্রথমাংশ৩=Somenath|শেষাংশ৪=Bhattacharyya|প্রথমাংশ৪=Maitree|তারিখ=2010-08-11|সাময়িকী=Saline Systems|খণ্ড=6|সংখ্যা নং=1|পাতাসমূহ=8|doi=10.1186/1746-1448-6-8|issn=1746-1448|pmc=PMC2928246|pmid=20699005}}</ref> পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানের প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বন অধিদপ্তর। বাংলাদেশে ১৯৯৩ সালে বন সংরক্ষণের জন্য একটি বন চক্র তৈরি করা হয় এবং এরপর থেকে প্রধান বন সংরক্ষক দের নিযুক্ত করা হয়েছে। উভয় সরকারের কাছ থেকে সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, সুন্দরবন প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট উভয় কারণে হুমকির মুখে রয়েছে। ২০০৭ সালে [[ঘূর্ণিঝড় সিডর|ঘূর্ণিঝড় সিডরের]] ভূমিধ্বসের কারণে প্রায় ৪০% সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি এবং স্বাদুপানির সরবরাহ হ্রাসের কারণে বনটি বর্ধিত সালিনিটিতেও ভুগছে। আবার ২০০৯ সালের মে মাসে [[ঘূর্ণিঝড় আইলা]] ব্যাপক হতাহতের সাথে সুন্দরবনকে বিধ্বস্ত করে। এই ঘূর্ণিঝড়ে কমপক্ষে ১,০০,০০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://timesofindia.indiatimes.com/india/23-dead-1-lakh-affected-as-cyclone-aila-hits-bengal/articleshow/4575274.cms|শিরোনাম=23 dead, 1 lakh affected as Cyclone Aila hits Bengal {{!}} India News - Times of India|শেষাংশ=May 25|প্রথমাংশ=PTI /|শেষাংশ২=2009|ওয়েবসাইট=The Times of India|ভাষা=en|সংগ্রহের-তারিখ=2021-09-17|শেষাংশ৩=Ist|প্রথমাংশ৩=22:38}}</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://earthobservatory.nasa.gov/images/38786/cyclone-aila|শিরোনাম=Cyclone Aila|তারিখ=2009-05-29|ওয়েবসাইট=earthobservatory.nasa.gov|ভাষা=en|সংগ্রহের-তারিখ=2021-09-17}}</ref> প্রস্তাবিত কয়লা চালিত [[রামপাল তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প|রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র]] টি [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] [[খুলনা বিভাগ|খুলনার]] [[বাগেরহাট জেলা|বাঘেরহাট জেলার]] [[রামপাল উপজেলা|রামপাল উপজেলায়]] সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার (৮.৭ মাইল) উত্তরে অবস্থিত, ইউনেস্কোর ২০১৬ সালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে এই অনন্য ম্যানগ্রোভ অরণ্যের আরও ক্ষতি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://en.prothom-alo.com/environment/news/122299/Unesco-calls-for-shelving-Rampal-project|শিরোনাম=Unesco calls for shelving Rampal project|তারিখ=2016-09-26|ওয়েবসাইট=web.archive.org|সংগ্রহের-তারিখ=2021-09-17|আর্কাইভের-তারিখ=২০১৬-০৯-২৬|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20160926203716/http://en.prothom-alo.com/environment/news/122299/Unesco-calls-for-shelving-Rampal-project|ইউআরএল-অবস্থা=bot: unknown}}</ref>
মাছ এবং কিছু অমেরুদণ্ডী প্রাণী ছাড়া অন্য বন্যপ্রাণী হত্যা বা দখলের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, মনে হচ্ছে বিংশ শতাব্দীতে হ্রাসপ্রাপ্ত জীববৈচিত্র্য বা প্রজাতির ক্ষতির একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ প্যাটার্ন রয়েছে, এবং বনের পরিবেশগত গুণমান হ্রাস পাচ্ছে।<ref>{{সাময়িকী উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://doi.org/10.1186/1746-1448-6-8|শিরোনাম=Dynamics of Sundarban estuarine ecosystem: eutrophication induced threat to mangroves|শেষাংশ=Manna|প্রথমাংশ=Suman|শেষাংশ২=Chaudhuri|প্রথমাংশ২=Kaberi|শেষাংশ৩=Bhattacharyya|প্রথমাংশ৩=Somenath|শেষাংশ৪=Bhattacharyya|প্রথমাংশ৪=Maitree|তারিখ=2010-08-11|সাময়িকী=Saline Systems|খণ্ড=6|সংখ্যা নং=1|পাতাসমূহ=8|doi=10.1186/1746-1448-6-8|issn=1746-1448|pmc=PMC2928246|pmid=20699005}}</ref> পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানের প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বন অধিদপ্তর। বাংলাদেশে ১৯৯৩ সালে বন সংরক্ষণের জন্য একটি বন চক্র তৈরি করা হয় এবং এরপর থেকে প্রধান বন সংরক্ষক দের নিযুক্ত করা হয়েছে। উভয় সরকারের কাছ থেকে সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, সুন্দরবন প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট উভয় কারণে হুমকির মুখে রয়েছে। ২০০৭ সালে [[ঘূর্ণিঝড় সিডর|ঘূর্ণিঝড় সিডরের]] ভূমিধ্বসের কারণে প্রায় ৪০% সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি এবং স্বাদুপানির সরবরাহ হ্রাসের কারণে বনটি বর্ধিত সালিনিটিতেও ভুগছে। আবার ২০০৯ সালের মে মাসে [[ঘূর্ণিঝড় আইলা]] ব্যাপক হতাহতের সাথে সুন্দরবনকে বিধ্বস্ত করে। এই ঘূর্ণিঝড়ে কমপক্ষে ১,০০,০০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://timesofindia.indiatimes.com/india/23-dead-1-lakh-affected-as-cyclone-aila-hits-bengal/articleshow/4575274.cms|শিরোনাম=23 dead, 1 lakh affected as Cyclone Aila hits Bengal {{!}} India News - Times of India|শেষাংশ=May 25|প্রথমাংশ=PTI /|শেষাংশ২=2009|ওয়েবসাইট=The Times of India|ভাষা=en|সংগ্রহের-তারিখ=2021-09-17|শেষাংশ৩=Ist|প্রথমাংশ৩=22:38}}</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://earthobservatory.nasa.gov/images/38786/cyclone-aila|শিরোনাম=Cyclone Aila|তারিখ=2009-05-29|ওয়েবসাইট=earthobservatory.nasa.gov|ভাষা=en|সংগ্রহের-তারিখ=2021-09-17}}</ref> প্রস্তাবিত কয়লা চালিত [[রামপাল তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প|রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র]] টি [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] [[খুলনা বিভাগ|খুলনার]] [[বাগেরহাট জেলা|বাগেরহাট জেলার]] [[রামপাল উপজেলা|রামপাল উপজেলায়]] সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার (৮.৭ মাইল) উত্তরে অবস্থিত, ইউনেস্কোর ২০১৬ সালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে এই অনন্য ম্যানগ্রোভ অরণ্যের আরও ক্ষতি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://en.prothom-alo.com/environment/news/122299/Unesco-calls-for-shelving-Rampal-project|শিরোনাম=Unesco calls for shelving Rampal project|তারিখ=2016-09-26|ওয়েবসাইট=web.archive.org|সংগ্রহের-তারিখ=2021-09-17|আর্কাইভের-তারিখ=২০১৬-০৯-২৬|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20160926203716/http://en.prothom-alo.com/environment/news/122299/Unesco-calls-for-shelving-Rampal-project|ইউআরএল-অবস্থা=bot: unknown}}</ref>


== নামকরণ ==
== নামকরণ ==
বাংলায় ''সুন্দরবন''-এর আক্ষরিক অর্থ ''সুন্দর জঙ্গল'' বা ''সুন্দর বনভূমি''।<ref name="sundar">{{cite book|title=সামসাদ বাংলা-ইংরেজি অভিধান|chapter-url=https://dsalsrv04.uchicago.edu/cgi-bin/app/biswas-bengali_query.py?qs=%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%B0&searchhws=yes|year=2000|publisher=সাহিত্য সামসাদ|page=১০১৭|chapter=সুন্দর|author=Biswas, S.|location=কলকাতা|সংগ্রহের-তারিখ=১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১|আর্কাইভের-তারিখ=১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20190918161310/https://dsalsrv04.uchicago.edu/cgi-bin/app/biswas-bengali_query.py?qs=%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%B0&searchhws=yes|ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর}}</ref><ref name="ban">{{cite book|title=সামসাদ বাংলা-ইংরেজি অভিধান|chapter-url=https://dsalsrv04.uchicago.edu/cgi-bin/app/biswas-bengali_query.py?qs=%E0%A6%AC%E0%A6%A8&searchhws=yes|year=২০০০|publisher=সাহিত্য সামসাদ|page=৭১৭|chapter=বন|author=Biswas, S.|location=কলকাতা|সংগ্রহের-তারিখ=১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১|আর্কাইভের-তারিখ=১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20190918161301/https://dsalsrv04.uchicago.edu/cgi-bin/app/biswas-bengali_query.py?qs=%E0%A6%AC%E0%A6%A8&searchhws=yes|ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর}}</ref> [[সুন্দরী]] গাছ থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে, যা সেখানে প্রচুর জন্মায়। অন্যান্য সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এরকম হতে পারে যে, এর নামকরণ হয়তো হয়েছে "সমুদ্র বন" বা "চন্দ্র-বান্ধে (বাঁধে)" (প্রাচীন আদিবাসী) থেকে। তবে সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে [[সুন্দরী]] গাছ থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে।<ref name="Bpedia" />
বাংলায় ''সুন্দরবন''-এর আক্ষরিক অর্থ ''সুন্দর জঙ্গল'' বা ''সুন্দর বনভূমি''।<ref name="sundar">{{cite book|title=সামসাদ বাংলা-ইংরেজি অভিধান|chapter-url=https://dsalsrv04.uchicago.edu/cgi-bin/app/biswas-bengali_query.py?qs=%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%B0&searchhws=yes|year=2000|publisher=সাহিত্য সামসাদ|page=১০১৭|chapter=সুন্দর|author=Biswas, S.|location=কলকাতা|সংগ্রহের-তারিখ=১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১|আর্কাইভের-তারিখ=১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20190918161310/https://dsalsrv04.uchicago.edu/cgi-bin/app/biswas-bengali_query.py?qs=%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%B0&searchhws=yes|ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর}}</ref><ref name="ban">{{cite book|title=সামসাদ বাংলা-ইংরেজি অভিধান|chapter-url=https://dsalsrv04.uchicago.edu/cgi-bin/app/biswas-bengali_query.py?qs=%E0%A6%AC%E0%A6%A8&searchhws=yes|year=২০০০|publisher=সাহিত্য সামসাদ|page=৭১৭|chapter=বন|author=Biswas, S.|location=কলকাতা|সংগ্রহের-তারিখ=১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১|আর্কাইভের-তারিখ=১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20190918161301/https://dsalsrv04.uchicago.edu/cgi-bin/app/biswas-bengali_query.py?qs=%E0%A6%AC%E0%A6%A8&searchhws=yes|ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর}}</ref> [[সুন্দরী]] গাছ থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে, যা সেখানে প্রচুর জন্মায়। অন্যান্য সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এরকম হতে পারে যে, এর নামকরণ হয়তো হয়েছে "সমুদ্র বন" বা "চন্দ্র-বান্ধে (বাঁধে)" (প্রাচীন আদিবাসী) থেকে। তবে সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে [[সুন্দরী]] গাছ থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে।<ref name="Bpedia" /> সুন্দরবন স্থানীয়ভাবে বাদা বা [[বন|,]] হুলোবন, শুলোবন, মাল, মহাল হিসেবে পরিচিত। বাদা মানে [[জোয়ার-ভাটা]] বয়ে যায় যে বনে। [[ব্রিটিশ কাউন্সিল|ব্রিটিশ]] উপনিবেশের সময় এই বাদার নাম হয়ে যায় মহাল, মধুমহাল, গোলমহাল।


== ইতিহাস ==
== ইতিহাস ==
৫৩ নং লাইন: ৫৩ নং লাইন:
[[মুঘল সাম্রাজ্য|মুঘল আমলে]] (১২০৩-১৫৩৮) স্থানীয় এক রাজা পুরো সুন্দরবনের ইজারা নেন। ঐতিহাসিক আইনি পরিবর্তনগুলোয় কাঙ্ক্ষিত যেসব মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের প্রথম [[ম্যানগ্রোভ]] বন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক তত্ত্বাবধানের অধীনে আসা। ১৭৫৭ সালে [[ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি]] কর্তৃক মুঘল সম্রাট [[Alamgir II|দ্বিতীয় আলমগীর]] এর কাছ থেকে স্বত্বাধিকার পাওয়ার পরপরই সুন্দরবন এলাকার মানচিত্র তৈরি করা হয়। বনাঞ্চলটি সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আসে ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ভারতের তৎকালীন [[বঙ্গ|বাংলা]] প্রদেশে বন বিভাগ স্থাপনের পর থেকে।
[[মুঘল সাম্রাজ্য|মুঘল আমলে]] (১২০৩-১৫৩৮) স্থানীয় এক রাজা পুরো সুন্দরবনের ইজারা নেন। ঐতিহাসিক আইনি পরিবর্তনগুলোয় কাঙ্ক্ষিত যেসব মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের প্রথম [[ম্যানগ্রোভ]] বন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক তত্ত্বাবধানের অধীনে আসা। ১৭৫৭ সালে [[ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি]] কর্তৃক মুঘল সম্রাট [[Alamgir II|দ্বিতীয় আলমগীর]] এর কাছ থেকে স্বত্বাধিকার পাওয়ার পরপরই সুন্দরবন এলাকার মানচিত্র তৈরি করা হয়। বনাঞ্চলটি সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আসে ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ভারতের তৎকালীন [[বঙ্গ|বাংলা]] প্রদেশে বন বিভাগ স্থাপনের পর থেকে।


অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুন্দরবনের আয়তন বর্তমানের প্রায় দ্বিগুণ ছিল। বনের উপর মানুষের অধিক চাপ ক্রমান্বয়ে এর আয়তন সংকুচিত করেছে। ১৮২৮ সালে ব্রিটিশ সরকার সুন্দরবনের স্বত্ত্বাধীকার অর্জন করে। এল. টি হজেয ১৮২৯ সালে সুন্দরবনের প্রথম জরীপ কার্য পরিচালনা করেন। ১৮৭৮ সালে সমগ্র সুন্দরবন এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসাবে ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় সুন্দরবনের ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে পড়ে। যা বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় ৪.৩% এবং সমগ্র বনভূমির প্রায় ৬৬%।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুন্দরবনের আয়তন বর্তমানের প্রায় দ্বিগুণ ছিল। বনের উপর মানুষের অধিক চাপ ক্রমান্বয়ে এর আয়তন সংকুচিত করেছে। ১৮২৮ সালে ব্রিটিশ সরকার সুন্দরবনের স্বত্ত্বাধীকার অর্জন করে। এল. টি হজেয ১৮২৯ সালে সুন্দরবনের প্রথম জরিপ কার্য পরিচালনা করেন। ১৮৭৮ সালে সমগ্র সুন্দরবন এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসাবে ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় সুন্দরবনের ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে পড়ে। যা বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় ৪.৩% এবং সমগ্র বনভূমির প্রায় ৬৬%।


সুন্দরবনের উপর প্রথম বন ব্যবস্থাপনা বিভাগের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৯ সালে। ১৯৬৫ সালের বন আইন (ধারা ৮) মোতাবেক, সুন্দরবনের একটি বড় অংশকে সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয় ১৮৭৫-৭৬ সালে। পরবর্তী বছরের মধ্যেই বাকি অংশও সংরক্ষিত বনভূমির স্বীকৃতি পায়। এর ফলে দূরবর্তী বেসামরিক জেলা প্রশাসনের কর্তৃত্ব থেকে তা চলে যায় বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে। পরবর্তীকালে ১৮৭৯ সালে বন ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশাসনিক একক হিসেবে বন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার সদর দপ্তর ছিল [[খুলনা]]য়। সুন্দরবনের জন্য ১৮৯৩-৯৮ সময়কালে প্রথম বন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণিত হয়।<ref name="hussain">Hussain, Z. and G. Acharya, 1994. (Eds.) Mangroves of the Sundarbans. Volume two : Bangladesh. IUCN, Bangkok, Thailand. 257 p.</ref><ref>UNDP, 1998. Integrated resource development of the Sundarbans Reserved Forests, Bangladesh. Volume I Project BGD/84/056, United Nations Development Programme, Food and Agriculture Organization of the United Nations, Dhaka, The People’s Republic of Bangladesh. 323 p.</ref>
সুন্দরবনের উপর প্রথম বন ব্যবস্থাপনা বিভাগের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৯ সালে। ১৯৬৫ সালের বন আইন (ধারা ৮) মোতাবেক, সুন্দরবনের একটি বড় অংশকে সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয় ১৮৭৫-৭৬ সালে। পরবর্তী বছরের মধ্যেই বাকি অংশও সংরক্ষিত বনভূমির স্বীকৃতি পায়। এর ফলে দূরবর্তী বেসামরিক জেলা প্রশাসনের কর্তৃত্ব থেকে তা চলে যায় বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে। পরবর্তীকালে ১৮৭৯ সালে বন ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশাসনিক একক হিসেবে বন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার সদর দপ্তর ছিল [[খুলনা]]য়। সুন্দরবনের জন্য ১৮৯৩-৯৮ সময়কালে প্রথম বন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণীত হয়।<ref name="hussain">Hussain, Z. and G. Acharya, 1994. (Eds.) Mangroves of the Sundarbans. Volume two : Bangladesh. IUCN, Bangkok, Thailand. 257 p.</ref><ref>UNDP, 1998. Integrated resource development of the Sundarbans Reserved Forests, Bangladesh. Volume I Project BGD/84/056, United Nations Development Programme, Food and Agriculture Organization of the United Nations, Dhaka, The People’s Republic of Bangladesh. 323 p.</ref>


১৯১১ সালে সুন্দরবনকে ট্র্যাক্ট আফ ওয়াস্ট ল্যান্ড হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়, যা না তো কখনো জরিপ করা হয়েছে আর না তো কোনদিন শুমারীর অধীনে এসেছে। তখন [[হুগলী নদী]]র মোহনা থেকে [[মেঘনা নদী]]র মোহনা পর্যন্ত প্রায় ১৬৫ মাইল (২৬৬ কি.মি.) এলাকা জুড়ে এর সীমানা নির্ধারিত হয়।
১৯১১ সালে সুন্দরবনকে ট্র্যাক্ট আফ ওয়াস্ট ল্যান্ড হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়, যা না তো কখনো জরিপ করা হয়েছে আর না তো কোনদিন শুমারীর অধীনে এসেছে। তখন [[হুগলী নদী]]র মোহনা থেকে [[মেঘনা নদী]]র মোহনা পর্যন্ত প্রায় ১৬৫ মাইল (২৬৬ কি.মি.) এলাকা জুড়ে এর সীমানা নির্ধারিত হয়।
৮২ নং লাইন: ৮২ নং লাইন:


=== স্বাদুজলের জলাভূমির বনাঞ্চল ===
=== স্বাদুজলের জলাভূমির বনাঞ্চল ===
সুন্দরবনের স্বাদুজল জলাভূমির বনাঞ্চল বাংলাদেশের ক্রান্তীয় আর্দ্র-সপুষ্পক বনের অন্তর্গত। এধরনের বন নোনাজলযুক্ত জলাভূমির উদাহরণ। স্বাদুজলের জীবমন্ডলের জল সামান্য নোনা এবং বর্ষাকালে এই লবণাক্ততা কিছুটা হ্রাস পায়, বিশেষ করে যখন গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদের জলের কারণে নোনাজল দূর হয় এবং পলিমাটির পুরু আস্তরণ জমা হয়।
সুন্দরবনের [[স্বাদু জল|স্বাদুজল]] জলাভূমির বনাঞ্চল বাংলাদেশের ক্রান্তীয় আর্দ্র-সপুষ্পক বনের অন্তর্গত। এধরনের বন নোনাজলযুক্ত জলাভূমির উদাহরণ। স্বাদুজলের জীবমন্ডলের জল সামান্য নোনা এবং বর্ষাকালে এই লবণাক্ততা কিছুটা হ্রাস পায়, বিশেষ করে যখন গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদের জলের কারণে নোনাজল দূর হয় এবং পলিমাটির পুরু আস্তরণ জমা হয়।


== উদ্ভিদবৈচিত্র্য ==
== উদ্ভিদবৈচিত্র্য ==
৮৮ নং লাইন: ৮৮ নং লাইন:
[[চিত্র:সুন্দরবন পশ্চিম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য.jpg|thumb|সুন্দরবনের বিখ্যাত গোলপাতা গাছ।]]
[[চিত্র:সুন্দরবন পশ্চিম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য.jpg|thumb|সুন্দরবনের বিখ্যাত গোলপাতা গাছ।]]
[[চিত্র:বেত গাছ.jpg|thumb|বেত গাছ]]
[[চিত্র:বেত গাছ.jpg|thumb|বেত গাছ]]
সুন্দরবনের প্রধান বনজ বৈচিত্রের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সুন্দরী,গেওয়া, ঝামটি গরান এবং কেওড়া। ১৯০৩ সালে প্রকাশিত প্রেইন এর হিসেব মতে সর্বমোট ২৪৫টি শ্রেণী এবং ৩৩৪টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে।
সুন্দরবনের প্রধান বনজ বৈচিত্রের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সুন্দরী, গেওয়া, ঝামটি গরান এবং কেওড়া। ১৯০৩ সালে প্রকাশিত প্রেইন এর হিসেব মতে সর্বমোট ২৪৫টি শ্রেণী এবং ৩৩৪টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে।।

সুন্দরবনের প্রধান গাছপালার মধ্যে অন্যতম সুন্দরী, গেওয়া, গড়ান, পশুর, বাইন, হেঁতাল, গোলপাতা, খামু, লতা সুন্দরী, কেওড়া, ধুন্দুল, আমুর, ছৈলা, ওড়া, কাঁকরা, সিংরা, ঝানা, খলশি ইত্যাদি। কিন্তু সুন্দরবনের নামের সমার্থক হিসেবে যে তরুটি জড়িয়ে আছে, সেটি সুন্দরীগাছ।


ব-দ্বীপিয় নয় এমন অন্যান্য উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বনভূমি এবং উচ্চভূমির বনাঞ্চলের তুলনায় বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বনভূমিতে উদ্ভিদ জীবনপ্রবাহের ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।
ব-দ্বীপিয় নয় এমন অন্যান্য উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বনভূমি এবং উচ্চভূমির বনাঞ্চলের তুলনায় বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বনভূমিতে উদ্ভিদ জীবনপ্রবাহের ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।
পূর্ববর্তীটিরউদ্ভিদ জীবনচক্রের ভিন্নতা ব্যাখ্যা করা হয়েছে উত্তর-পূর্বে বিশুদ্ধ পানি ও নিম্ন লবণাক্ততার প্রভাব এবং পানি নিষ্কাশন ও পলি সঞ্চয়ের ভিত্তিতে।
পূর্ববর্তীটিরউদ্ভিদ জীবনচক্রের ভিন্নতা ব্যাখ্যা করা হয়েছে উত্তর-পূর্বে বিশুদ্ধ পানি ও নিম্ন লবণাক্ততার প্রভাব এবং পানি নিষ্কাশন ও পলি সঞ্চয়ের ভিত্তিতে।


সুন্দরবনকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে একটি আর্দ্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনভূমি হিসেবে যা গড়ে উঠেছে সুগঠিত সৈকতে কেওড়া (''Sonneratia apetala'') ও অন্যান্য সামুদ্র উপকূলবর্তী বৃক্ষ প্রধান বনাঞ্চলে। ঐতিহাসিকভাবে সুন্দরবনে প্রধান তিন প্রকারের উদ্ভিদ রয়েছে যাদের চিহ্ণিত করা হয়েছে পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা, স্বাদু পানি প্রবাহের মাত্রা ও ভূপ্রকৃতির মাত্রার সাথে সম্পর্কের গভীরতার উপর ভিত্তি করে।
সুন্দরবনকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে একটি আর্দ্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনভূমি হিসেবে যা গড়ে উঠেছে সুগঠিত সৈকতে কেওড়া (''Sonneratia apetala'') ও অন্যান্য সামুদ্র উপকূলবর্তী বৃক্ষ প্রধান বনাঞ্চলে। ঐতিহাসিকভাবে সুন্দরবনে প্রধান তিন প্রকারের উদ্ভিদ রয়েছে যাদের চিহ্ণিত করা হয়েছে পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা, স্বাদু পানি প্রবাহের মাত্রা ও ভূপ্রকৃতির মাত্রার সাথে সম্পর্কের গভীরতার উপর ভিত্তি করে।


অঞ্চল জুড়ে সুন্দরী ও গেওয়া এর প্রাধাণ্যের পাশাপাশি বিক্ষিপ্তভাবে রয়েছে ধুন্দল এবং কেওড়া। [[ঘাস]] ও গুল্মের মধ্যে শন, নল খাগড়া, গোলপাতা রয়েছে সুবিন্যস্তভাবে। কেওড়া নতুন তৈরি হওয়া পলিভূমিকে নির্দেশ করে এবং এই প্রজাতিটি বন্যপ্রাণীর জন্য জরুরি , বিশেষ করে চিত্রা হরিণের জন্য ।
অঞ্চল জুড়ে সুন্দরী ও গেওয়া এর প্রাধাণ্যের পাশাপাশি বিক্ষিপ্তভাবে রয়েছে ধুন্দল এবং কেওড়া। [[ঘাস]] ও গুল্মের মধ্যে শন, নল খাগড়া, গোলপাতা রয়েছে সুবিন্যস্তভাবে। কেওড়া নতুন তৈরি হওয়া পলিভূমিকে নির্দেশ করে এবং এই প্রজাতিটি বন্যপ্রাণীর জন্য জরুরি , বিশেষ করে চিত্রা হরিণের জন্য ।
১০১ নং লাইন: ১০৩ নং লাইন:
[[চিত্র:Big croc.jpg|thumb|right| 220px| সুন্দরবনের একটি কুমির।]]
[[চিত্র:Big croc.jpg|thumb|right| 220px| সুন্দরবনের একটি কুমির।]]
[[চিত্র:সুন্দরবনের কুমির খামার.jpg|thumb|সুন্দরবনের কুমির খামারে চাষকৃত কুমির ছানা]]
[[চিত্র:সুন্দরবনের কুমির খামার.jpg|thumb|সুন্দরবনের কুমির খামারে চাষকৃত কুমির ছানা]]
সুন্দরবনে ব্যাপক প্রাণীবৈচিত্র্য বিদ্যমান। প্রাণীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা সুন্দরবনের কিছু কিছু এলাকায় শিকার নিষিদ্ধ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ অভয়ারণ্যের মত, যেখানে শর্তহীনভাবে বনজ সম্পদ সংগ্রহ করা যায়না এবং বন্য প্রাণীর জীবনে সামান্যই ব্যাঘাত ঘটে। যদিও এটা স্পষ্ট যে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের প্রাণী সম্পদ হ্রাস পেয়েছে<ref name="hussain" /> এবং সুন্দরবনও এর বাইরে নয় । তারপরও সুন্দরবন বেশ অনেকগুলি প্রাণী প্রাজাতি ও তাদের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রজাতিদের টিকিয়ে রেখেছে। এদের মধ্যে বাঘ ও শুশুককে প্রাধাণ্য দিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে প্রানীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা ও পর্যটন উন্নয়নের। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সম্পূর্ণ বিপরীত পরিবেশে থাকা এ দুইটির অবস্থা এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা সামগ্রিক প্রাণীবৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার শক্তিশালী সূচক। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের হিসেব মতে সুন্দরবন ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল যা পৃথিবীতে বাঘের একক বৃহত্তম অংশ।<ref name="www.bforest.gov.bd/highlights.php">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=www.bforest.gov.bd/highlights.php |ইউআরএল=http://www.bforest.gov.bd/highlights.php |সংগ্রহের-তারিখ=১ মে ২০০৮ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20041207075333/http://www.bforest.gov.bd/highlights.php |আর্কাইভের-তারিখ=৭ ডিসেম্বর ২০০৪ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref>
সুন্দরবনে ব্যাপক প্রাণীবৈচিত্র্য বিদ্যমান। প্রাণীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা সুন্দরবনের কিছু কিছু এলাকায় শিকার নিষিদ্ধ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ অভয়ারণ্যের মত, যেখানে শর্তহীনভাবে বনজ সম্পদ সংগ্রহ করা যায়না এবং বন্য প্রাণীর জীবনে সামান্যই ব্যাঘাত ঘটে। যদিও এটা স্পষ্ট যে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের প্রাণী সম্পদ হ্রাস পেয়েছে<ref name="hussain" /> এবং সুন্দরবনও এর বাইরে নয় । তারপরও সুন্দরবন বেশ অনেকগুলি প্রাণীর প্রজাতি ও তাদের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রজাতিদের টিকিয়ে রেখেছে। এদের মধ্যে বাঘ ও শুশুককে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে প্রানীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা ও পর্যটন উন্নয়নের। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সম্পূর্ণ বিপরীত পরিবেশে থাকা এ দুইটির অবস্থা এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা সামগ্রিক প্রাণীবৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার শক্তিশালী সূচক। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের হিসেব মতে সুন্দরবন ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল যা পৃথিবীতে বাঘের একক বৃহত্তম অংশ।<ref name="www.bforest.gov.bd/highlights.php">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=www.bforest.gov.bd/highlights.php |ইউআরএল=http://www.bforest.gov.bd/highlights.php |সংগ্রহের-তারিখ=১ মে ২০০৮ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20041207075333/http://www.bforest.gov.bd/highlights.php |আর্কাইভের-তারিখ=৭ ডিসেম্বর ২০০৪ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref>

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে বিচিত্র জীববৈচিত্র্যের আধার বাংলাদেশের সুন্দরবন বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ সর্বাধিক প্রচুর গাছের প্রজাতি হল সুন্দরী এবং গেওয়া। বনে ২৯০টি [[পাখি]], ১২০টি [[মাছ|মাছ,]] ৪২টি [[স্তন্যপায়ী]], ৩৫টি [[সরীসৃপ]] এবং ৮টি [[উভচর প্রাণী|উভচর]] প্রজাতিসহ ৪৫৯টি [[বন্যপ্রাণী]]<nowiki/>র বাসস্থান রয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে বাংলাদেশের সুন্দরবনে বিভিন্ন প্রজাতির একটি বড় অংশ বিদ্যমান (যেমনঃ ৩০ শতাংশ সরীসৃপ, ৩৭ শতাংশ পাখি ও ৩৭ শতাংশ স্তন্যপায়ী) এবং এদের একটি বড় অংশ দেশের অন্যান্য অংশে বিরল।<ref>Scott, D.A. 1991. Asia and the Middle East Wetlands. M. Finlayson and M. Moser (eds.). Oxford: 151-178.</ref> সরকারের মতে এই প্রানীবৈচিত্র্যের মধ্যে ২ প্রজাতির উভচর, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৫ প্রজাতির পাখি এবং ৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী বর্তমানে হুমকির মুখে


{{multiple image|perrow=1|align=right|image1=Sundarban Tiger.jpg|caption1=সুন্দরবনে একটি বাংলার বাঘ|image2=Axis axis Kanha 4kl.jpg|caption2=[[chital|চিত্রল]] হরিণ (''Axis axis'')|image3=Macaca mulatta 2.JPG|caption3=একটি [[রিসাস ম্যাকাক]] (''Macaca mulatta'')}}
{{multiple image|perrow=1|align=right|image1=Sundarban Tiger.jpg|caption1=সুন্দরবনে একটি বাংলার বাঘ|image2=Axis axis Kanha 4kl.jpg|caption2=[[chital|চিত্রল]] হরিণ (''Axis axis'')|image3=Macaca mulatta 2.JPG|caption3=একটি [[রিসাস ম্যাকাক]] (''Macaca mulatta'')}}
১০৭ নং লাইন: ১১১ নং লাইন:
সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান মৌলিক প্রকৃতির এবং যা বন্য প্রাণীর বিশাল আবসস্থল। বন্য প্রাণীর সংখ্যা এবং এর লালনক্ষেত্রের উপর মানুষের সম্পদ সংগ্রহ ও বন ব্যবস্থাপনার প্রভাব অনেক। [[কচ্ছপ]] ([[কেটো কচ্ছপ]] – ''Betagur baska'', [[সুন্দি কাছিম]] – ''Lissemys punctata'' এবং [[ধুম তরুণাস্থি কাছিম]] – ''Trionyx hurum''), [[গিরগিটি]] (''Varanus flavescens'' ও [[গুই সাপ]] – ''Varanus salvator''), [[অজগর]] (''Python molurus'') এবং [[রয়েল বেঙ্গল টাইগার]] (''Panthera tigris tigris'') সুন্দরবনের স্থানীয় প্রজাতিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এদের মধ্যে কিছু প্রজাতি সংরক্ষিত, বিশেষ করে [[বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) (সংশোধিত) আইন, ১৯৭৪]] (P.O. 23 of 1973) দ্বারা। বিভিন্ন প্রজাতির [[হরিণ]] (Chital deer- ''Axis axis,'' Hog deer – ''Axis procinus'' ও Swamp deer – ''Cervus duvauceli''), [[মহিষ]] (''Bubalis bubalis''), [[জাভাদেশীয় গণ্ডার]] – ''Rhiniceros sondaicus'' ও [[ভারতীয় গণ্ডার]] – ''Rhinoceros unicornis'') এবং [[স্বাদুপানির কুমির]]ের (''Crocodylus palustris'') মত কিছু কিছু প্রজাতি সুন্দরবনে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝির দিক থেকে।<ref name=sarakar>Sarker, S.U. 1993. Ecology of Wildlife UNDP/FAO/BGD/85/011. Field Document N. 50 Institute of Forestry and Environmental Sciences. Chittagong, Bangladesh. 251 p.</ref>
সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান মৌলিক প্রকৃতির এবং যা বন্য প্রাণীর বিশাল আবসস্থল। বন্য প্রাণীর সংখ্যা এবং এর লালনক্ষেত্রের উপর মানুষের সম্পদ সংগ্রহ ও বন ব্যবস্থাপনার প্রভাব অনেক। [[কচ্ছপ]] ([[কেটো কচ্ছপ]] – ''Betagur baska'', [[সুন্দি কাছিম]] – ''Lissemys punctata'' এবং [[ধুম তরুণাস্থি কাছিম]] – ''Trionyx hurum''), [[গিরগিটি]] (''Varanus flavescens'' ও [[গুই সাপ]] – ''Varanus salvator''), [[অজগর]] (''Python molurus'') এবং [[রয়েল বেঙ্গল টাইগার]] (''Panthera tigris tigris'') সুন্দরবনের স্থানীয় প্রজাতিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এদের মধ্যে কিছু প্রজাতি সংরক্ষিত, বিশেষ করে [[বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) (সংশোধিত) আইন, ১৯৭৪]] (P.O. 23 of 1973) দ্বারা। বিভিন্ন প্রজাতির [[হরিণ]] (Chital deer- ''Axis axis,'' Hog deer – ''Axis procinus'' ও Swamp deer – ''Cervus duvauceli''), [[মহিষ]] (''Bubalis bubalis''), [[জাভাদেশীয় গণ্ডার]] – ''Rhiniceros sondaicus'' ও [[ভারতীয় গণ্ডার]] – ''Rhinoceros unicornis'') এবং [[স্বাদুপানির কুমির]]ের (''Crocodylus palustris'') মত কিছু কিছু প্রজাতি সুন্দরবনে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝির দিক থেকে।<ref name=sarakar>Sarker, S.U. 1993. Ecology of Wildlife UNDP/FAO/BGD/85/011. Field Document N. 50 Institute of Forestry and Environmental Sciences. Chittagong, Bangladesh. 251 p.</ref>


সুন্দরবনে নানা প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। এগুলোর মধ্যে জলে রয়েছে [[কুমির]], [[হাঙর]] প্রভৃতি। স্থলে রয়েছে [[রয়েল বেঙ্গল টাইগার]], [[হরিণ]], [[বানর]], [[সজারু]], [[শিয়াল|শেয়াল]], নানা ধরনের [[পাখি]], [[মৌমাছি]], [[বনমোরগ|বন মোরগ]] ইত্যাদি
{{multiple image|perrow=1|image1=Big croc.jpg|caption1=সুন্দরবন কুমির প্রজনন কেন্দ্রে একটি নোনা জলের কুমির|image2=2009 Pristis microdon1.JPG|caption2=একটি বড় টুথ করাতমাছ|image3=Periophthalmus argentilineatus.jpg|caption3=একটি কাদাঅধিনায়ক}}


{{multiple image|perrow=1|image1=Big croc.jpg|caption1=সুন্দরবন কুমির প্রজনন কেন্দ্রে একটি নোনা জলের কুমির|image2=2009 Pristis microdon1.JPG|caption2=একটি বড় টুথ করাতমাছ|image3=Periophthalmus argentilineatus.jpg|caption3=একটি কাদাঅধিনায়ক}}
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে বিচিত্র জীববৈচিত্র্যের আধার বাংলাদেশের সুন্দরবন বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রাজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ [[সরীসৃপ]] এবং টি উভচর প্রাজাতির আবাসস্থল। এ থেকে বোঝা যায় যে বাংলাদেশের সুন্দরবনে বিভিন্ন প্রজাতির একটি বড় অংশ বিদ্যমান (যেমনঃ ৩০ শতাংশ সরীসৃপ, ৩৭ শতাংশ পাখি ও ৩৭ শতাংশ স্তন্যপায়ী) এবং এদের একটি বড় অংশ দেশের অন্যান্য অংশে বিরল।<ref>Scott, D.A. 1991. Asia and the Middle East Wetlands. M. Finlayson and M. Moser (eds.). Oxford: 151-178.</ref> সরকারের মতে এই প্রানীবৈচিত্র্যের মধ্যে ২ প্রজাতির উভচর, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৫ প্রজাতির পাখি এবং ৫ প্রজাতির স্তনপায়ী বর্তমানে হুমকির মুখে।<ref name="sarakar" />


{{multiple image|direction=horizontal|total_width=400|image1=Ichthyophaga ichthyaetus -Kazaringa, Assam, India-8 (3).jpg|caption1=একটি ধূসর মাথা বিশিষ্ট মাছের ঈগল|image2=Blue-eared Kingfisher.JPG|caption2=সুন্দরবনে নীল গ্রীবা মাছরাঙারও দেখা মিলে।}}
{{multiple image|direction=horizontal|total_width=400|image1=Ichthyophaga ichthyaetus -Kazaringa, Assam, India-8 (3).jpg|caption1=একটি ধূসর মাথা বিশিষ্ট মাছের ঈগল|image2=Blue-eared Kingfisher.JPG|caption2=সুন্দরবনে নীল গ্রীবা মাছরাঙারও দেখা মিলে।}}
১১৮ নং লাইন: ১২২ নং লাইন:
২০০৪ সালের হিসেব মতে, সুন্দরবন প্রায় ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাঘের আবাসস্থল যা বাঘের একক বৃহত্তম অংশ<ref name="www.bforest.gov.bd/highlights.php" />। এসব বাঘ উল্ল্যেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ, গড়ে প্রতি বছরে প্রায় ১০০ থেকে ২৫০ জন, মেরে ফেলার কারণে ব্যপকভাবে পরিচিত। মানুষের বাসস্থানের সীমানার কাছাকাছি থাকা একমাত্র বাঘ নয় এরা। বাঘের অভায়ারণ্যে চারপাশ ঘেরা বান্ধবগড়ে, মানুষের উপর এমন আক্রমণ বিরল। নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ায় ভারতীয় অংশের সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে একটিও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে বাংলাদেশের সুন্দরবনে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত কালপরিধিতে অর্ধাশতাধিকের বেশি বাঘ মানুষের হাতে মারা গেছে।<ref name="সুন্দরবনের পশু শিকারের মহোৎসব" />
২০০৪ সালের হিসেব মতে, সুন্দরবন প্রায় ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাঘের আবাসস্থল যা বাঘের একক বৃহত্তম অংশ<ref name="www.bforest.gov.bd/highlights.php" />। এসব বাঘ উল্ল্যেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ, গড়ে প্রতি বছরে প্রায় ১০০ থেকে ২৫০ জন, মেরে ফেলার কারণে ব্যপকভাবে পরিচিত। মানুষের বাসস্থানের সীমানার কাছাকাছি থাকা একমাত্র বাঘ নয় এরা। বাঘের অভায়ারণ্যে চারপাশ ঘেরা বান্ধবগড়ে, মানুষের উপর এমন আক্রমণ বিরল। নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ায় ভারতীয় অংশের সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে একটিও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে বাংলাদেশের সুন্দরবনে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত কালপরিধিতে অর্ধাশতাধিকের বেশি বাঘ মানুষের হাতে মারা গেছে।<ref name="সুন্দরবনের পশু শিকারের মহোৎসব" />


স্থানীয় লোকজন ও সরকারীভাবে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বাঘের আক্রমণ ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। স্থানীয় জেলেরা বনদেবী বনবিবির প্রার্থণা ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে যাত্রা শুরুর আগে। সুন্দরবনে নিরাপদ বিচরণের জন্য প্রার্থণা করাও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে জরুরি। বাঘ যেহেতু সবসময় পেছন থেকে আক্রমণ করে সেহেতু জেলে এবং কাঠুরেরা মাথার পেছনে মুখোশ পরে। এ ব্যবস্থা স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করলেও পরে বাঘ এ কৌশল বুঝে ফেলে এবং আবারও আক্রমণ হতে থাকে। সরকারি কর্মকর্তারা আমেরিকান ফুটবল খেলোয়াড়দের প্যাডের মত শক্ত প্যাড পরেন যা গলার পেছনের অংশ ঢেকে রাখে। এ ব্যবস্থা করা হয় শিরদাঁড়ায় বাঘের কামড় প্রতিরোধ করার জন্য যা তাদের পছন্দের আক্রমণ কৌশল।
স্থানীয় লোকজন ও সরকারীভাবে দায়িত্বপ্রাপ্তরা [[বাঘ|বাঘে]]<nowiki/>র আক্রমণ ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। স্থানীয় জেলেরা বনদেবী বনবিবির প্রার্থণা ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে যাত্রা শুরুর আগে। সুন্দরবনে নিরাপদ বিচরণের জন্য প্রার্থণা করাও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে জরুরি। বাঘ যেহেতু সবসময় পেছন থেকে আক্রমণ করে সেহেতু জেলে এবং কাঠুরেরা মাথার পেছনে মুখোশ পরে। এ ব্যবস্থা স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করলেও পরে বাঘ এ কৌশল বুঝে ফেলে এবং আবারও আক্রমণ হতে থাকে। সরকারি কর্মকর্তারা আমেরিকান ফুটবল খেলোয়াড়দের প্যাডের মত শক্ত প্যাড পরেন যা গলার পেছনের অংশ ঢেকে রাখে। এ ব্যবস্থা করা হয় শিরদাঁড়ায় বাঘের কামড় প্রতিরোধ করার জন্য যা তাদের পছন্দের আক্রমণ কৌশল।


=== মৎস্য সম্পদ ===
=== মৎস্য সম্পদ ===
[[চিত্র:সুন্দরবনের অধিবাসীদের নদীতে মাছধরার দৃশ্য.jpg|thumb|সুন্দরবনের অধিবাসীদের অন্যতম জীবিকা নদীতে মাছধরা।]]
[[চিত্র:সুন্দরবনের অধিবাসীদের নদীতে মাছধরার দৃশ্য.jpg|thumb|সুন্দরবনের অধিবাসীদের অন্যতম জীবিকা নদীতে মাছধরা।]]
সুন্দরবনের সামগ্রিক মাছের ওপর পূর্বাপর কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি। ফলে মাছের বর্তমান অবস্থা, বিলুপ্ত মাছ, বিলুপ্তপ্রায় মাছের ওপর উপাত্তনির্ভর তথ্য পাওয়া যায় না। শুধু, মানুষ যেসব মাছ খায় এবং যেসব মাছ রপ্তানি উপযোগী, সেসব মাছ চিহ্নিত করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, সুন্দরবনে শিরদাঁড়াওয়ালা মাছ রয়েছে প্রায় ৩০০ প্রজাতির। সাইডেনস্টিকার ও হাই-এর (পরিপ্রেক্ষিত ১৯৭৮) মতে, এর মধ্যে বাণিজ্যিক মাছ ১২০ প্রজাতির; অবশ্য বার্নাকসেকের মতে, (২০০০) বাণিজ্যিক মাছ ৮৪ প্রজাতির, [[কাঁকড়া]]-[[চিংড়ি]] ১২ প্রজাতির ও ৯ প্রজাতির [[শামুক]] রয়েছে।
সুন্দরবনের সামগ্রিক মাছের ওপর পূর্বাপর কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি। ফলে মাছের বর্তমান অবস্থা, বিলুপ্ত মাছ, বিলুপ্তপ্রায় মাছের ওপর উপাত্তনির্ভর তথ্য পাওয়া যায় না।শুধু, মানুষ যেসব মাছ খায় এবং যেসব মাছ রপ্তানি উপযোগী, সেসব মাছ চিহ্নিত করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, সুন্দরবনে শিরদাঁড়াওয়ালা মাছ রয়েছে প্রায় ৩০০ প্রজাতির। সাইডেনস্টিকার ও হাই-এর (পরিপ্রেক্ষিত ১৯৭৮) মতে, এর মধ্যে বাণিজ্যিক মাছ ১২০ প্রজাতির; অবশ্য বার্নাকসেকের মতে, (২০০০) বাণিজ্যিক মাছ ৮৪ প্রজাতির, [[কাঁকড়া]]-[[চিংড়ি]] ১২ প্রজাতির ও ৯ প্রজাতির [[শামুক]] রয়েছে।


সুন্দরবনে মৎস্যসম্পদকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সব মাছ মিলিয়ে হয় সাদা মাছ, বাকিরা বাগদা, গলদা, কাঁকড়া।<ref name="P.Alo" /> আশির দশকে চিংড়ির পোনা ধরা শুরু হওয়ার পর মাছের প্রাচুর্য হঠাৎ কমে যায়। একসময় স্থানীয় জনসাধারণের প্রাণিজ প্রোটিন ৮০ শতাংশ মেটাতো মাছ। এখন মাছ খাওয়ার সৌভাগ্য এলাকার খুব কম লোকের ভাগ্যে জোটে। সুন্দরবনে কালা হাঙর, ইলশা কামট, ঠুঁটি কামট, কানুয়া কামট পাওয়া যায়। আগে এদের খালিশপুর এলাকা পর্যন্ত পাওয়া যেতো, এখন (২০১০) অনেক দক্ষিণে সরে গেছে। পশ্চিম সুন্দরবনে এদের উৎপাত বেশি। এরা সংখ্যায় অনেক কমে গেছে, বিশেষ করে কালা হাঙর প্রায় দেখাই যায় না। ৯ প্রজাতির শাঁকজ বা শাপলাপাতা মাছের অধিকাংশই এখন (২০১০) সুন্দরবনের খাঁড়ি এলাকায় দেখা যায় না।<ref name="P.Alo" />
সুন্দরবনে মৎস্যসম্পদকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সব মাছ মিলিয়ে হয় সাদা মাছ, বাকিরা বাগদা, গলদা, কাঁকড়া।<ref name="P.Alo" /> আশির দশকে চিংড়ির পোনা ধরা শুরু হওয়ার পর মাছের প্রাচুর্য হঠাৎ কমে যায়। একসময় স্থানীয় জনসাধারণের প্রাণিজ প্রোটিন ৮০ শতাংশ মেটাতো মাছ। এখন মাছ খাওয়ার সৌভাগ্য এলাকার খুব কম লোকের ভাগ্যে জোটে। সুন্দরবনে কালা হাঙর, ইলশা কামট, ঠুঁটি কামট, কানুয়া কামট পাওয়া যায়। আগে এদের খালিশপুর এলাকা পর্যন্ত পাওয়া যেতো, এখন (২০১০) অনেক দক্ষিণে সরে গেছে। পশ্চিম সুন্দরবনে এদের উৎপাত বেশি। এরা সংখ্যায় অনেক কমে গেছে, বিশেষ করে কালা হাঙর প্রায় দেখাই যায় না। ৯ প্রজাতির শাঁকজ বা শাপলাপাতা মাছের অধিকাংশই এখন (২০১০) সুন্দরবনের খাঁড়ি এলাকায় দেখা যায় না।<ref name="P.Alo" />
১৪০ নং লাইন: ১৪৪ নং লাইন:
বনের বলেশ্বর, কুঙ্গা নদীতে যথেষ্ট [[ইলিশ]] ধরা পড়ে। দুই প্রজাতির ইলিশের মধ্যে চন্দনা ইলিশ কম পাওয়া যায় (২০১০)। ৪ প্রজাতির ফ্যাসা মাছের মধ্যে রাম ফ্যাসা কম পাওয়া যায় (২০১০)। বৈরাগী মাছের সংখ্যাও কমেছে। সুন্দরবনের ভেতর পোড়ামহল, আন্ধারমানিক, জোংরা, শুবদি-গুবদি এলাকার মাঝারি আকারের বিলগুলোতে বর্ষায় পানি আটকে যায়, কোথাও জোয়ারের পানি ঢোকে। এই বিলগুলোর পানি মিঠা, এখানে মিঠাপানির মাছ পাওয়া যায়। বেশির ভাগ জিওল মাছ। [[কই]], [[শিং]], [[মাগুর]], দুই প্রজাতির [[টাকি]], [[শোল]] ছাড়াও ছোট '''[[টেংরা]],''' [[পুঁটি]], [[খলসে]], [[চ্যালা]], [[দাঁড়কিনা]], কুঁচো [[চিংড়ি]]সহ নানা মাছ পাওয়া যায়। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে এসব বিলে লোনা পানি ঢুকছে। এই বিলগুলোর মাছ তাই শেষ হওয়ার দিন গুনছে।<ref name="P.Alo" />
বনের বলেশ্বর, কুঙ্গা নদীতে যথেষ্ট [[ইলিশ]] ধরা পড়ে। দুই প্রজাতির ইলিশের মধ্যে চন্দনা ইলিশ কম পাওয়া যায় (২০১০)। ৪ প্রজাতির ফ্যাসা মাছের মধ্যে রাম ফ্যাসা কম পাওয়া যায় (২০১০)। বৈরাগী মাছের সংখ্যাও কমেছে। সুন্দরবনের ভেতর পোড়ামহল, আন্ধারমানিক, জোংরা, শুবদি-গুবদি এলাকার মাঝারি আকারের বিলগুলোতে বর্ষায় পানি আটকে যায়, কোথাও জোয়ারের পানি ঢোকে। এই বিলগুলোর পানি মিঠা, এখানে মিঠাপানির মাছ পাওয়া যায়। বেশির ভাগ জিওল মাছ। [[কই]], [[শিং]], [[মাগুর]], দুই প্রজাতির [[টাকি]], [[শোল]] ছাড়াও ছোট '''[[টেংরা]],''' [[পুঁটি]], [[খলসে]], [[চ্যালা]], [[দাঁড়কিনা]], কুঁচো [[চিংড়ি]]সহ নানা মাছ পাওয়া যায়। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে এসব বিলে লোনা পানি ঢুকছে। এই বিলগুলোর মাছ তাই শেষ হওয়ার দিন গুনছে।<ref name="P.Alo" />


সুন্দরবনে বর্তমানে (২০১০) ১৩ ধরনের পদ্ধতিতে মাছ ধরা হয়। ঠেলা জাল, রকেট জালের ছিদ্র খুব ছোট হওয়ায় চারা মাছ এবং মাছের ডিম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুন্দরবন এলাকায় জেলে বাড়ায় মৎস্যসম্পদ দ্রুত কমে যাচ্ছে। তবে বিষ প্রয়োগে মাছ মারায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়।<ref name="P.Alo" />
সুন্দরবনে বর্তমানে (২০১০) ১৩ ধরনের পদ্ধতিতে মাছ ধরা হয়। ঠেলা জাল, রকেট জালের ছিদ্র খুব ছোট হওয়ায় চারা মাছ এবং মাছের ডিম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।তবে বিষ প্রয়োগে মাছ মারায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়।<ref name="P.Alo" />


== অর্থনীতি ==
== অর্থনীতি ==
১৫৫ নং লাইন: ১৫৯ নং লাইন:
১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যে বনজ সম্পদের স্থিতির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে প্রধানত দুইটি ম্যানগ্রোভ প্রজাতির ক্ষেত্রে - সুন্দরী এবং গেওয়া। এই হ্রাসের পরিমাণ যথাক্রমে ৪০ শতাংশ ও ৪৫ শতাংশ (ফরেস্টাল ১৯৬০ এবং ও ডি এ ১৯৮৫)। তাছাড়া, মাছ ও কিছু অমেরুদন্ডী প্রাণী ব্যতীত অন্যান্য বন্যপশু শিকারের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সেখানে জীব বৈচিত্র্য হ্রাসের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে (এ শতকে উল্লেখযোগ্য হল কমপক্ষে ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও ১ প্রজাতির সরীসৃপ) এবং ফলশ্রুতিতে বাস্তুসংস্থানের মান হ্রাস পাচ্ছে (আই ইউ সি এন ১৯৯৪)।
১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যে বনজ সম্পদের স্থিতির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে প্রধানত দুইটি ম্যানগ্রোভ প্রজাতির ক্ষেত্রে - সুন্দরী এবং গেওয়া। এই হ্রাসের পরিমাণ যথাক্রমে ৪০ শতাংশ ও ৪৫ শতাংশ (ফরেস্টাল ১৯৬০ এবং ও ডি এ ১৯৮৫)। তাছাড়া, মাছ ও কিছু অমেরুদন্ডী প্রাণী ব্যতীত অন্যান্য বন্যপশু শিকারের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সেখানে জীব বৈচিত্র্য হ্রাসের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে (এ শতকে উল্লেখযোগ্য হল কমপক্ষে ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও ১ প্রজাতির সরীসৃপ) এবং ফলশ্রুতিতে বাস্তুসংস্থানের মান হ্রাস পাচ্ছে (আই ইউ সি এন ১৯৯৪)।


== বাংলাদেশের অভয়ারণ্য ==
== সংরক্ষিত এলাকা ==
=== ভারতের জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্য ===
[[চিত্র:Sunderbans map.png|thumb|right|254x254px|ভারতীয় সুন্দরবনের সুরক্ষিত এলাকার একটি মানচিত্রে দেখানো হয়েছে বাঘ সংরক্ষণের সীমা, জাতীয় উদ্যান এবং তিনটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, সংরক্ষণ ও বাসস্থান কেন্দ্র, বসবাসের শহর এবং প্রবেশপথ। সমগ্র বনভূমি (গাঢ় সবুজ) এলাকাটি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ গঠন করে, এবং জাতীয় উদ্যান ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণাগারগুলির বাইরে অবশিষ্ট বনগুলির একটি [[সংরক্ষিত বন]]ের স্থিতি দেওয়া হয়েছে।]]
;[[সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান]]: পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান একটি [[জাতীয় উদ্যান]] বা [[জাতীয় উদ্যান|ন্যাশনাল পার্ক]], [[টাইগার রিজার্ভ]] এবং একটি [[জীবমন্ডল সংরক্ষণ]] নিয়ে গঠিত। এটি [[গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ|গঙ্গার দ্বীপ]] এবং বাংলাদেশের অন্তর্গত সুন্দরবন সংলগ্ন সুন্দরবনের পশ্চিম অংশ অবস্থিত। [[বদ্বীপ]] এলাকাটি ঘন ম্যানগ্রোভ বন দ্বারা আচ্ছাদিত, এবং [[বেঙ্গল টাইগার]]ের জন্য বৃহত্তম বাসস্থানের মধ্যে একটি। এখানে লবণাক্ত জলের কুমিরের সাথে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, সরীসৃপ প্রজাতি রয়েছে। বর্তমানে সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানটি ছিল ১৯৭৩ সালে সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ মূল এলাকা এবং ১৯৭৭ সালে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষিত হয়। ৪ ই মে ১৯৮৪ সালে জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষণা করা হয়।

[[চিত্র:Sajnekhali wildlife sanctuary and others part of Sundarbans 01.jpg|thumb|সজনেখালি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের স্বাগতম তোরণ]]
;[[সজনেখালি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য]]: সজনেখালি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য হচ্ছে ভারতের [[পশ্চিমবঙ্গ]] রাজ্যের [[দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা|দক্ষিণ ২৪ পরগণা]] জেলার সুন্দরবনের সজনেখালি নামক স্থানে অবস্থিত একটি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য। এটির আয়তন ৩৬২ বর্গকিমি। ১৯৬০ সালে [[পশ্চিমবঙ্গ সরকার]] এটিকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করে এবং ১৯৭৬ সালে তা পুনরায় ঘোষিত হয়।<ref name="কল্যাণ">কল্যাণ চক্রবর্তী, বিশ্বজিত রায়চৌধুরী, ভারতের বন ও বন্যপ্রাণী, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ, ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১, কলকাতা, পৃষ্ঠা-১২৭-১২৮।</ref>

;'''হ্যালিডে দ্বীপ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য''': [[হ্যালিডে দ্বীপ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য]] হচ্ছে [[ভারত]]ের [[পশ্চিমবঙ্গ]] [[ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল|রাজ্যের]] [[দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা]]য় অবস্থিত একটি বন্যপ্রাণ [[অভয়ারণ্য]]। [[বঙ্গোপসাগর]]ের নিকটে মাতলা নদীর মুখে প্রায় ৬ বর্গকিমি বনাঞ্চল নিয়ে এই অভয়ারণ্যটি অবস্থিত। এটি ১৯৭৬ সালে অভয়ারণ্যরূপে ঘোষিত হয়।<ref name=Tourist>{{বই উদ্ধৃতি|পাতাসমূহ=34|শিরোনাম=Tourist Guide Book of Sundarbans|প্রথমাংশ=Joydeb|শেষাংশ=Das|তারিখ=May 2015|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=iX7wCAAAQBAJ&pg=PA12&dq=%22Haliday+Wildlife+Sanctuary%22&hl=en&sa=X&ved=0CC4Q6AEwAGoVChMIkJPlmq7wxwIVUAOSCh1CKwcK#v=onepage&q=%22Haliday%20Wildlife%20Sanctuary%22&f=false}}</ref><ref name=Weekend>{{সংবাদ উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.theindianpanorama.news/en/travel-news/weekend-breaks-from-kolkata-24437/|শিরোনাম=Weekend Breaks From Kolkata|প্রকাশক=''[[The Indian Panorama]]''|তারিখ=August 8, 2014|সংগ্রহের-তারিখ=September 11, 2015}}</ref>

;'''লোথিয়ান দ্বীপ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য''': লোথিয়ান দ্বীপ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হল [[ভারত]]ের [[পশ্চিমবঙ্গ]] [[ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল|রাজ্যের]] [[দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা]]য় অবস্থিত একটি বন্যপ্রাণী [[অভয়ারণ্য]]। [[বঙ্গোপসাগর]]ের কাছে [[সপ্তমুখী নদী]]র মোহনায় এই দ্বীপটি অবস্থিত। ১৯৪৮ সালে এই বনাঞ্চলটি প্রথম অভয়ারণ্য হিসেবে বিজ্ঞাপিত হয় এবং ১৯৭৬ সালে তা পুনরায় ঘোষিত হয়। এই অভয়ারণ্যটি সুন্দরবন ব-দ্বীপের অংশবিশেষ।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি| ইউআরএল=http://protectedplanet.net/sites/Lothian_Island_Sanctuary| শিরোনাম=Lothian Island Sanctuary| কর্ম=protectedplanet.net| সংগ্রহের-তারিখ=৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮| আর্কাইভের-তারিখ=১৫ জুলাই ২০১৪| আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20140715052559/http://protectedplanet.net/sites/Lothian_Island_Sanctuary| ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর}}</ref>

এই জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্য গুলি ছাড়ার [[ভাগবতপুর কুমির প্রকল্প]], [[সজনেখালী পাখিযরালয়]] রয়েছে ভারতীয় সুন্দরবনে।

=== বাংলাদেশের অভয়ারণ্য ===
বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ৬,৫১৭ বর্গ কি.মি.। এর মধ্যে নদী, খাল ও খাঁড়ি রয়েছে প্রায় ১,৮০০ বর্গ কি.মি. যাদের প্রশস্ততা কয়েক মিটার থেকে শুরু করে কয়েক কি.মি. পর্যন্ত। জালের মত পরস্পর যুক্ত নৌপথের কারণে সুন্দরবনের প্রায় সব জায়গাতেই সহজে নৌকায় করে যাওয়া যায়। সুন্দরবনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ২টি বনবিভাগ, ৪টি প্রশাসনিক রেঞ্জ - চাঁদপাই, শরণখোলা, খুলনা ও বুড়িগোয়ালিনি এবং ১৬টি বন স্টেশন। বনটি আবার ৫৫ কম্পার্টমেন্ট এবং ৯টি ব্লকে বিভক্ত।<ref name="Bpedia" />
বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ৬,৫১৭ বর্গ কি.মি.। এর মধ্যে নদী, খাল ও খাঁড়ি রয়েছে প্রায় ১,৮০০ বর্গ কি.মি. যাদের প্রশস্ততা কয়েক মিটার থেকে শুরু করে কয়েক কি.মি. পর্যন্ত। জালের মত পরস্পর যুক্ত নৌপথের কারণে সুন্দরবনের প্রায় সব জায়গাতেই সহজে নৌকায় করে যাওয়া যায়। সুন্দরবনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ২টি বনবিভাগ, ৪টি প্রশাসনিক রেঞ্জ - চাঁদপাই, শরণখোলা, খুলনা ও বুড়িগোয়ালিনি এবং ১৬টি বন স্টেশন। বনটি আবার ৫৫ কম্পার্টমেন্ট এবং ৯টি ব্লকে বিভক্ত।<ref name="Bpedia" />
১৯৯৩ সালে নতুন করে খুলনা বন সার্কেল গঠন করা হয়েছে বন সংরক্ষণের জন্য এবং তাতে একটি সংরক্ষক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বনবিভাগের প্রশাসনিক প্রধাণের পদটি খুলনাকেন্দ্রিক। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অধীনে রয়েছে বহুসংখ্যক পেশাদার, অপেশাদার ও সহায়ক জনবল। ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রীয় একক হল কম্পার্টমেন্ট। চারটি বন রেঞ্জের অধীনে থাকা ৫৫টি কম্পার্টমেন্ট স্পস্টতই নদী, খাল, খাঁড়ির মত প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট অনুযায়ী বিভক্ত।
১৯৯৩ সালে নতুন করে খুলনা বন সার্কেল গঠন করা হয়েছে বন সংরক্ষণের জন্য এবং তাতে একটি সংরক্ষক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বনবিভাগের প্রশাসনিক প্রধাণের পদটি খুলনাকেন্দ্রিক। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অধীনে রয়েছে বহুসংখ্যক পেশাদার, অপেশাদার ও সহায়ক জনবল। ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রীয় একক হল কম্পার্টমেন্ট। চারটি বন রেঞ্জের অধীনে থাকা ৫৫টি কম্পার্টমেন্ট স্পস্টতই নদী, খাল, খাঁড়ির মত প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট অনুযায়ী বিভক্ত।
১৭৯ নং লাইন: ১৬৯ নং লাইন:


=== বাংলাদেশে সুন্দরবনের দস্যুতার অবসান ===
=== বাংলাদেশে সুন্দরবনের দস্যুতার অবসান ===
সুন্দরবনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বিভিন্ন পেশাজীবী সম্প্রদায়ের মানুষ ও উপকূলীয় অধিবাসীদের জন্য বিশেষত বাংলাদেশ অংশে সবথেকে বড় আতঙ্কের বিষয় ছিল বনদস্যুদের উৎপাত,ডাকাতি ও অপহরণ। এ উৎপাত ঠেকাতে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, র‌্যাব, পুলিশ ও বন বিভাগের প্রহরীদের সক্রিয় প্রচেষ্টা থাকলেও সমন্বিত উদ্যোগের অভাব ছিল। ২০১২ সালে র‌্যাব মহাপরিচালককে প্রধান করে সুন্দরবনের [[জলদস্যুতা|জলদস্যু]] দমনের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠিত হয়। অবশেষে সাংবাদিক মোহসীন-উল-হাকীমের মধ্যস্থতায় ২০১৬ সালের ৩১ মে মাস্টার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সুন্দরবনের দস্যুমুক্তকরন শুরু হয় এবং ১ নভেম্বর ২০১৮ জলদস্যুদের সর্বশেষ ৬ টি বাহিনী আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সুন্দরবনের বাংলাদেশের অংশের প্রায় ৪০০ বছরের জলদস্যুতার অবসান ঘটে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.prothomalo.com/bangladesh/সুন্দরবনের-জলদস্যু-‘মাস্টার-বাহিনী’র-আত্মসমর্পণ|শিরোনাম=সুন্দরবনের জলদস্যু 'মাস্টার বাহিনী'র আত্মসমর্পণ|শেষাংশ=প্রতিবেদক|প্রথমাংশ=নিজস্ব|তারিখ=2016-05-31|ওয়েবসাইট=প্রথম আলো|ভাষা=bn|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20210503173132/https://www.prothomalo.com/bangladesh/%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%B2%E0%A6%A6%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81-%E2%80%98%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%80%E2%80%99%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%A3|আর্কাইভের-তারিখ=2021-05-03|সংগ্রহের-তারিখ=2021-05-03}}</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.bbc.com/bengali/news-41077375|শিরোনাম=সুন্দরবন দখল যাদের নিত্যদিনের লড়াই|শেষাংশ=খান|প্রথমাংশ=মাসুদ হাসান|তারিখ=2017-09-13|ওয়েবসাইট=BBC News বাংলা|ভাষা=bn|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20210503174052/https://www.bbc.com/bengali/news-41077375|আর্কাইভের-তারিখ=2021-05-03|সংগ্রহের-তারিখ=2021-05-03}}</ref>
সুন্দরবনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বিভিন্ন পেশাজীবী সম্প্রদায়ের মানুষ ও উপকূলীয় অধিবাসীদের জন্য বিশেষত বাংলাদেশ অংশে সবথেকে বড় আতঙ্কের বিষয় ছিল বনদস্যুদের উৎপাত,[[ডাকাতি]] ও অপহরণ। এ উৎপাত ঠেকাতে [[নৌবাহিনী]], [[কোস্টগার্ড রূপকল্প ২০৩০|কোস্টগার্ড]], র‌্যাব, পুলিশ ও বন বিভাগের প্রহরীদের সক্রিয় প্রচেষ্টা থাকলেও সমন্বিত উদ্যোগের অভাব ছিল। ২০১২ সালে র‌্যাব মহাপরিচালককে প্রধান করে সুন্দরবনের [[জলদস্যুতা|জলদস্যু]] দমনের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠিত হয়। অবশেষে সাংবাদিক মোহসীন-উল-হাকীমের মধ্যস্থতায় ২০১৬ সালের ৩১ মে মাস্টার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সুন্দরবনের [[দস্যু বনহুর|দস্যু]]<nowiki/>মুক্তকরন শুরু হয় এবং ১ নভেম্বর ২০১৮ [[জলদস্যুতা|জলদস্যুদে]]<nowiki/>র সর্বশেষ ৬ টি বাহিনী আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সুন্দরবনের বাংলাদেশের অংশের প্রায় ৪০০ বছরের জলদস্যুতার অবসান ঘটে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.prothomalo.com/bangladesh/সুন্দরবনের-জলদস্যু-‘মাস্টার-বাহিনী’র-আত্মসমর্পণ|শিরোনাম=সুন্দরবনের জলদস্যু 'মাস্টার বাহিনী'র আত্মসমর্পণ|শেষাংশ=প্রতিবেদক|প্রথমাংশ=নিজস্ব|তারিখ=2016-05-31|ওয়েবসাইট=প্রথম আলো|ভাষা=bn|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20210503173132/https://www.prothomalo.com/bangladesh/%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%B2%E0%A6%A6%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81-%E2%80%98%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%80%E2%80%99%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%A3|আর্কাইভের-তারিখ=2021-05-03|সংগ্রহের-তারিখ=2021-05-03}}</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.bbc.com/bengali/news-41077375|শিরোনাম=সুন্দরবন দখল যাদের নিত্যদিনের লড়াই|শেষাংশ=খান|প্রথমাংশ=মাসুদ হাসান|তারিখ=2017-09-13|ওয়েবসাইট=[[বিবিসি বাংলা]]|ভাষা=bn|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20210503174052/https://www.bbc.com/bengali/news-41077375|আর্কাইভের-তারিখ=2021-05-03|সংগ্রহের-তারিখ=2021-05-03}}</ref>


== জনপ্রিয় মাধ্যমে সুন্দরবনের উপস্থিতি ==
== জনপ্রিয় মাধ্যমে সুন্দরবনের উপস্থিতি ==
১৯১ নং লাইন: ১৮১ নং লাইন:
*[[অপারেশন সুন্দরবন]] [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] একটি আসন্ন রোমাঞ্চকর [[পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র]]। সুন্দরবনকে জলদুস্য মুক্ত করার অভিযান নিয়ে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করছেন [[দীপংকর দীপন|দীপংকর সেনগুপ্ত দীপন]]।
*[[অপারেশন সুন্দরবন]] [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] একটি আসন্ন রোমাঞ্চকর [[পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র]]। সুন্দরবনকে জলদুস্য মুক্ত করার অভিযান নিয়ে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করছেন [[দীপংকর দীপন|দীপংকর সেনগুপ্ত দীপন]]।


== বিপন্ন ও বিলুপ্ত প্রজাতি ==
{{একাধিক চিত্র
| align = right
| perrow = 1
| image1 = Jamrach-1877.jpg
| caption1 = সুন্দরবনের বিলুপ্ত Javan rhinoceros, ১৮৭৭ সালের চিত্রাঙ্কন থেকে
| image2 = GangeticDolphin.jpg
| caption2 = [[South Asian river dolphin| গঙ্গা ডলফিন]], ১৮৯৪ সালের চিত্রাঙ্কন থেকে
}}
বনের অনুসন্ধানগুলি প্রকাশ করে যে দুটি প্রধান বাণিজ্যিক ম্যানগ্রোভ প্রজাতি - সুন্দরী ( ''হেরিটিরা'' এসপিপি) এবং গেওয়া ( ''এক্সোইকারিয়া আগালোচা'' ) - ১৯৫৯ এবং ১৯৮৩ সালের মধ্যে যথাক্রমে ৪০% এবং ৪৫% হ্রাস পেয়েছে । মাছ এবং কিছু [[অমেরুদণ্ডী প্রাণী]] ব্যতীত সমস্ত বন্যপ্রাণী হত্যা বা ধরার উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, এটি প্রতীয়মান হয় যে বিংশ শতাব্দীতে ধ্বংস হওয়া জীববৈচিত্র্য বা প্রজাতির (কমপক্ষে ছয়টি স্তন্যপায়ী এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ সরীসৃপ) একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ প্যাটার্ন রয়েছে এবং সেটা হচ্ছে "মূল ম্যানগ্রোভ বনের পরিবেশগত গুণমান হ্রাস পাচ্ছে"। <ref name="hussain">{{বই উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Mangroves of the Sundarbans|তারিখ=1994|প্রকাশক=International Union for Conservation of Nature and Natural Resources|oclc=773534471}}</ref>

সুন্দরবনের মধ্যে বসবাসকারী বিপন্ন প্রজাতি এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মধ্যে রয়েছে বেঙ্গল টাইগার, [[লোনা পানির কুমির|মোহনা কুমির]], [[কেটো কচ্ছপ|উত্তর নদী টেরাপিন]] ( ''বাটাগুর বাসকা'' ), [[জলপাইরঙা সাগর কাছিম|অলিভ রিডলি সামুদ্রিক কচ্ছপ]], [[গঙ্গা নদী শুশুক|গঙ্গা ডলফিন]], স্থল কচ্ছপ, [[শিকরেঠুঁটি সাগর কাছিম|হকসবিল সামুদ্রিক কচ্ছপ]] এবং রাজকীয় কাঁকড়া । সুন্দরবনে বিশ্বব্যাপী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিপন্ন জীব ধারণ করে যা মধ্যে [[কালোমুখ প্যারাপাখি]] রয়েছে এবং এটি [[চামচঠুঁটো বাটান]] এবং [[দেশি গাঙচষা|দেশি গাঙচষার]] জন্য গুরুত্বপূর্ণ শীতকালীন স্থান। <ref name="BirdLife">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=BirdLife Data Zone|ইউআরএল=http://datazone.birdlife.org/site/factsheet/sunderbans-(east-south-west-wildlife-sanctuaries)-iba-bangladesh/details|ইউআরএল-অবস্থা=live|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20221202132031/http://datazone.birdlife.org/site/factsheet/sunderbans-(east-south-west-wildlife-sanctuaries)-iba-bangladesh/details|আর্কাইভের-তারিখ=2 December 2022|সংগ্রহের-তারিখ=2 December 2022}}</ref> কিছু প্রজাতি যেমন হগ হরিণ ( ''অ্যাক্সিস পোর্সিনাস'' ), [[মহিষ|জল মহিষ]] ( ''বুবালাস বুবালিস'' ), [[বারশিঙ্গা|বারসিংহ]] বা জলা হরিণ ( ''সারভাস ডুভাউসেলি'' ), [[জাভাদেশীয় গণ্ডার|জাভান গণ্ডার]] ( ''গণ্ডার সোন্ডাইকাস'' ), [[ভারতীয় গণ্ডার]] ( ''রাইনোসেরোস ইউনিকর্নিস'' ) এবং [[স্বাদুপানির কুমির]] থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতি ব্রিটিশ ও স্থানীয়দের ব্যাপক চোরাচালান ও শিকারের কারণে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সুন্দরবন থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। <ref name="sarakar">Sarker, S.U. 1993. Ecology of Wildlife UNDP/FAO/BGD/85/011. Field Document N. 50 Institute of Forestry and Environmental Sciences. Chittagong, Bangladesh.</ref> অন্যান্য বিপন্ন স্তন্যপায়ী প্রজাতি রয়েছে, যেমন [[মুখপোড়া হনুমান]] ( ''সেমনোপিথেকাস পাইলিয়াটাস'' ), মসৃণ প্রলিপ্ত উটর ( ''লুট্রোগেল পারসপিসিলাটা'' ), [[এশীয় উদবিলাই]] ( ''অনিক্স সিনেরিয়া'' ) এবং [[বড় বাঘডাশ]] ( ''ভিভেরা জিবেথা'' )।
== তথ্যসূত্র ==
== তথ্যসূত্র ==
{{সূত্র তালিকা|30em}}
{{সূত্র তালিকা|30em}}
২০৩ নং লাইন: ২০৫ নং লাইন:
* Jalais, Annu. (2008). "Unmasking the Cosmopolitan Tiger", ''Nature and Culture'' (vol. 3, no. 1), pp.&nbsp;25–40.
* Jalais, Annu. (2008). "Unmasking the Cosmopolitan Tiger", ''Nature and Culture'' (vol. 3, no. 1), pp.&nbsp;25–40.
* Jalais, Annu. (2008). "Bonbibi: Bridging Worlds", ''Indian Folklore'', serial no. 28, Jan 2008.
* Jalais, Annu. (2008). "Bonbibi: Bridging Worlds", ''Indian Folklore'', serial no. 28, Jan 2008.
* Jalais, Annu. (2009). "Confronting Authority, Negotiating Morality: tiger prawn seed collection in the Sundarbans", International Collective in Support of Fishworkers, Yemaya, 32, Nov. [https://www.icsf.net/en/yemaya/detail/EN/1582.html] {{ওয়েব আর্কাইভ|url=https://web.archive.org/web/20180902084426/https://www.icsf.net/en/yemaya/detail/EN/1582.html |date=২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ }}; Also in French: http://base.d-p-h.info/en/fiches/dph/fiche-dph-8148.html
* Jalais, Annu. (2009). "Confronting Authority, Negotiating Morality: tiger prawn seed collection in the Sundarbans", International Collective in Support of Fishworkers, Yemaya, 32, Nov. [https://www.icsf.net/en/yemaya/detail/EN/1582.html] {{ওয়েব আর্কাইভ|url=https://web.archive.org/web/20180902084426/https://www.icsf.net/en/yemaya/detail/EN/1582.html |date=২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ }}; Also in French: http://base.d-p-h.info/en/fiches/dph/fiche-dph-8148.html {{ওয়েব আর্কাইভ|url=https://web.archive.org/web/20130511170603/http://base.d-p-h.info/en/fiches/dph/fiche-dph-8148.html |date=১১ মে ২০১৩ }}
* Jalais, Annu. (2010). "Braving Crocodiles with Kali: Being a prawn-seed collector and a modern woman in the 21st century Sundarbans", ''Socio-Legal Review'', Vol. 6.
* Jalais, Annu. (2010). "Braving Crocodiles with Kali: Being a prawn-seed collector and a modern woman in the 21st century Sundarbans", ''Socio-Legal Review'', Vol. 6.
* Montgomery, Sy (1995). ''Spell of the Tiger: The Man-Eaters of Sundarbans''. Houghton Mifflin Company, New York.
* Montgomery, Sy (1995). ''Spell of the Tiger: The Man-Eaters of Sundarbans''. Houghton Mifflin Company, New York.
* Rivers of Life: Living with Floods in Bangladesh. M. Q. Zaman. ''Asian Survey'', Vol. 33, No. 10 (October 1993), pp.&nbsp;985–996
* Rivers of Life: Living with Floods in Bangladesh. M. Q. Zaman. ''Asian Survey'', Vol. 33, No. 10 (October 1993), pp.&nbsp;985–996
* {{cite journal|title=Modern sediment supply to the lower delta plain of the Ganges-Brahmaputra River in Bangladesh|last2=Kepple|first2=E. B.|date=September 2001|pages=66|doi=10.1007/s003670100069|last1=Allison|first1=M. A.|journal=Geo-Marine Letters|volume=21|issue=2|bibcode=2001GML....21...66M|s2cid=140636544}}
* {{cite journal|title=Modern sediment supply to the lower delta plain of the Ganges-Brahmaputra River in Bangladesh|last2=Kepple|first2=E. B.|date=September 2001|pages=66|doi=10.1007/s003670100069|last1=Allison|first1=M. A.|journal=Geo-Marine Letters|volume=21|issue=2|bibcode=2001GML....21...66M|s2cid=140636544| issn = 0276-0460}}
* [https://web.archive.org/web/20091222015740/http://www.unep-wcmc.org/sites/wh/pdf/Sundarbans%20%5Bboth%5D.pdf Sundarbans on United Nations Environment Programme]
* [https://web.archive.org/web/20091222015740/http://www.unep-wcmc.org/sites/wh/pdf/Sundarbans%20%5Bboth%5D.pdf Sundarbans on United Nations Environment Programme]
* {{cite journal|title=Floods in Bangladesh: II. Flood Mitigation and Environmental Aspects|last=Brammer|first=H.|date=July 1990|pages=158–165|doi=10.2307/635323|jstor=635323|journal=The Geographical Journal|volume=156|issue=2}}
* {{cite journal|title=Floods in Bangladesh: II. Flood Mitigation and Environmental Aspects|last=Brammer|first=H.|date=July 1990|pages=158–165|doi=10.2307/635323|jstor=635323|journal=The Geographical Journal|volume=156|issue=2}}
২২১ নং লাইন: ২২৩ নং লাইন:
* {{বাংলাপিডিয়া}}
* {{বাংলাপিডিয়া}}
* [http://whc.unesco.org/en/list/798 ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় সুন্দরবন]
* [http://whc.unesco.org/en/list/798 ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় সুন্দরবন]
{{উইকিউক্তি}}

{{Bangladesh topics}}
{{Bangladesh topics}}
{{বাংলাদেশের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান}}
{{বাংলাদেশের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান}}
২৩৭ নং লাইন: ২৩৯ নং লাইন:
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের রামসার স্থান]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের রামসার স্থান]]
[[বিষয়শ্রেণী:খুলনা বিভাগের দর্শনীয় স্থান]]
[[বিষয়শ্রেণী:খুলনা বিভাগের দর্শনীয় স্থান]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলার বিশ্ব ঐতিহ্য]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের বিশ্ব ঐতিহ্য]]
[[বিষয়শ্রেণী:পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশ]]
[[বিষয়শ্রেণী:পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশ]]
[[বিষয়শ্রেণী:বঙ্গোপসাগর]]
[[বিষয়শ্রেণী:বঙ্গোপসাগর]]

১২:৪৬, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

সুন্দরবন
সুন্দরবনের অভ্যন্তর
মানচিত্র সুন্দরবনের অবস্থান দেখাচ্ছে
মানচিত্র সুন্দরবনের অবস্থান দেখাচ্ছে
বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, এশিয়া ও পৃথিবীর মধ্যে অবস্থান
মানচিত্র সুন্দরবনের অবস্থান দেখাচ্ছে
মানচিত্র সুন্দরবনের অবস্থান দেখাচ্ছে
বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, এশিয়া ও পৃথিবীর মধ্যে অবস্থান
মানচিত্র সুন্দরবনের অবস্থান দেখাচ্ছে
মানচিত্র সুন্দরবনের অবস্থান দেখাচ্ছে
বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, এশিয়া ও পৃথিবীর মধ্যে অবস্থান
মানচিত্র সুন্দরবনের অবস্থান দেখাচ্ছে
মানচিত্র সুন্দরবনের অবস্থান দেখাচ্ছে
বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, এশিয়া ও পৃথিবীর মধ্যে অবস্থান
মানচিত্র সুন্দরবনের অবস্থান দেখাচ্ছে
মানচিত্র সুন্দরবনের অবস্থান দেখাচ্ছে
বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, এশিয়া ও পৃথিবীর মধ্যে অবস্থান
অবস্থানখুলনা বিভাগ, বাংলাদেশ
পশ্চিমবঙ্গ , ভারত
নিকটবর্তী শহরখুলনা, কলকাতা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, কাকদ্বীপ, ও ক্যানিং
স্থানাঙ্ক২১°৫৭′ উত্তর ৮৯°০৫′ পূর্ব / ২১.৯৫০° উত্তর ৮৯.০৮৩° পূর্ব / 21.950; 89.083
আয়তন১,৩৯,৫০০ হেক্টর (৩,৪৫,০০০ একর)
স্থাপিত১৯৯১
কর্তৃপক্ষবাংলাদেশ সরকার (৬৬%), ভারত সরকার (৩৪%)
ধরনপ্রাকৃতিক
মানদণ্ডix, x
মনোনীত১৯৮৭ (১১তম অধিবেশন)
সূত্র নং৭৯৮
রাষ্ট্র বাংলাদেশ, ভারত
অঞ্চলএশিয়া প্যাসিফিক
প্রাতিষ্ঠানিক নামসুন্দরবন রিজার্ভ ফরেস্ট
মনোনীত২১ মে ১৯৯২[]

সুন্দরবন হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম। পদ্মা, মেঘনাব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরাবাগেরহাট জেলার কিছু অংশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনাদক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত।[] সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি।[] ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার (৬৬%)[] রয়েছে বাংলাদেশে[] এবং বাকি অংশ (৩৪%) রয়েছে ভারতের মধ্যে।

সুন্দরবন ৬ ডিসেম্বর ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।[] এর বাংলাদেশভারতীয় অংশ বস্তুত একই নিরবচ্ছিন্ন ভূমিখণ্ডের সন্নিহিত অংশ হলেও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে সূচিবদ্ধ হয়েছে; যথাক্রমে 'সুন্দরবন' ও 'সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান' নামে। এই সুরক্ষা সত্ত্বেও, আইইউসিএন রেড লিস্ট অফ ইকোসিস্টেম ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে ২০২০ সালের মূল্যায়নে ভারতীয় সুন্দরবনকে বিপন্ন বলে মনে করা হয়েছিল।[] সুন্দরবনকে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা। মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ, অর্থাৎ ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা, খাঁড়ি, বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল।[] বনভূমিটি, স্বনামে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমিরসাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। জরিপ মোতাবেক ১০৬ বাঘ ও ১০০০০০ থেকে ১৫০০০০ চিত্রা হরিণ রয়েছে এখন সুন্দরবন এলাকায়। ১৯৯২ সালের ২১ মে সুন্দরবন রামসার স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সুন্দরবনে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসে। প্রতি বছর দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ করার মাধ্যমে প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করে।

সর্বাধিক প্রচুর গাছের প্রজাতি হল সুন্দরী এবং গেওয়া। বনে ২৯০টি পাখি, ১২০টি মাছ, ৪২টি স্তন্যপায়ী, ৩৫টি সরীসৃপ এবং আটটি উভচর প্রজাতিসহ ৪৫৩টি প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বাসস্থান রয়েছে।[]

মাছ এবং কিছু অমেরুদণ্ডী প্রাণী ছাড়া অন্য বন্যপ্রাণী হত্যা বা দখলের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, মনে হচ্ছে বিংশ শতাব্দীতে হ্রাসপ্রাপ্ত জীববৈচিত্র্য বা প্রজাতির ক্ষতির একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ প্যাটার্ন রয়েছে, এবং বনের পরিবেশগত গুণমান হ্রাস পাচ্ছে।[] পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানের প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বন অধিদপ্তর। বাংলাদেশে ১৯৯৩ সালে বন সংরক্ষণের জন্য একটি বন চক্র তৈরি করা হয় এবং এরপর থেকে প্রধান বন সংরক্ষক দের নিযুক্ত করা হয়েছে। উভয় সরকারের কাছ থেকে সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, সুন্দরবন প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট উভয় কারণে হুমকির মুখে রয়েছে। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের ভূমিধ্বসের কারণে প্রায় ৪০% সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি এবং স্বাদুপানির সরবরাহ হ্রাসের কারণে বনটি বর্ধিত সালিনিটিতেও ভুগছে। আবার ২০০৯ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আইলা ব্যাপক হতাহতের সাথে সুন্দরবনকে বিধ্বস্ত করে। এই ঘূর্ণিঝড়ে কমপক্ষে ১,০০,০০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।[১০][১১] প্রস্তাবিত কয়লা চালিত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র টি বাংলাদেশের খুলনার বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলায় সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার (৮.৭ মাইল) উত্তরে অবস্থিত, ইউনেস্কোর ২০১৬ সালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে এই অনন্য ম্যানগ্রোভ অরণ্যের আরও ক্ষতি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।[১২]

নামকরণ

[সম্পাদনা]

বাংলায় সুন্দরবন-এর আক্ষরিক অর্থ সুন্দর জঙ্গল বা সুন্দর বনভূমি[১৩][১৪] সুন্দরী গাছ থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে, যা সেখানে প্রচুর জন্মায়। অন্যান্য সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এরকম হতে পারে যে, এর নামকরণ হয়তো হয়েছে "সমুদ্র বন" বা "চন্দ্র-বান্ধে (বাঁধে)" (প্রাচীন আদিবাসী) থেকে। তবে সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে সুন্দরী গাছ থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে।[] সুন্দরবন স্থানীয়ভাবে বাদা বা , হুলোবন, শুলোবন, মাল, মহাল হিসেবে পরিচিত। বাদা মানে জোয়ার-ভাটা বয়ে যায় যে বনে। ব্রিটিশ উপনিবেশের সময় এই বাদার নাম হয়ে যায় মহাল, মধুমহাল, গোলমহাল।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]
সুন্দরবনে শিকারের খোঁজে ক্ষুধার্ত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার

মুঘল আমলে (১২০৩-১৫৩৮) স্থানীয় এক রাজা পুরো সুন্দরবনের ইজারা নেন। ঐতিহাসিক আইনি পরিবর্তনগুলোয় কাঙ্ক্ষিত যেসব মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের প্রথম ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক তত্ত্বাবধানের অধীনে আসা। ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীর এর কাছ থেকে স্বত্বাধিকার পাওয়ার পরপরই সুন্দরবন এলাকার মানচিত্র তৈরি করা হয়। বনাঞ্চলটি সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আসে ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ভারতের তৎকালীন বাংলা প্রদেশে বন বিভাগ স্থাপনের পর থেকে।

অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুন্দরবনের আয়তন বর্তমানের প্রায় দ্বিগুণ ছিল। বনের উপর মানুষের অধিক চাপ ক্রমান্বয়ে এর আয়তন সংকুচিত করেছে। ১৮২৮ সালে ব্রিটিশ সরকার সুন্দরবনের স্বত্ত্বাধীকার অর্জন করে। এল. টি হজেয ১৮২৯ সালে সুন্দরবনের প্রথম জরিপ কার্য পরিচালনা করেন। ১৮৭৮ সালে সমগ্র সুন্দরবন এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসাবে ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় সুন্দরবনের ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে পড়ে। যা বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় ৪.৩% এবং সমগ্র বনভূমির প্রায় ৬৬%।

সুন্দরবনের উপর প্রথম বন ব্যবস্থাপনা বিভাগের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৯ সালে। ১৯৬৫ সালের বন আইন (ধারা ৮) মোতাবেক, সুন্দরবনের একটি বড় অংশকে সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয় ১৮৭৫-৭৬ সালে। পরবর্তী বছরের মধ্যেই বাকি অংশও সংরক্ষিত বনভূমির স্বীকৃতি পায়। এর ফলে দূরবর্তী বেসামরিক জেলা প্রশাসনের কর্তৃত্ব থেকে তা চলে যায় বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে। পরবর্তীকালে ১৮৭৯ সালে বন ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশাসনিক একক হিসেবে বন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার সদর দপ্তর ছিল খুলনায়। সুন্দরবনের জন্য ১৮৯৩-৯৮ সময়কালে প্রথম বন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণীত হয়।[১৫][১৬]

১৯১১ সালে সুন্দরবনকে ট্র্যাক্ট আফ ওয়াস্ট ল্যান্ড হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়, যা না তো কখনো জরিপ করা হয়েছে আর না তো কোনদিন শুমারীর অধীনে এসেছে। তখন হুগলী নদীর মোহনা থেকে মেঘনা নদীর মোহনা পর্যন্ত প্রায় ১৬৫ মাইল (২৬৬ কি.মি.) এলাকা জুড়ে এর সীমানা নির্ধারিত হয়।

ভৌগোলিক গঠন

[সম্পাদনা]
সুন্দরবনের মানচিত্র
উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিতে বনের সংরক্ষিত এলাকা দেখা যাচ্ছে। গাড় সবুজ রঙে সুন্দরবন দেখা যাচ্ছে যার উত্তর দিকে ঘিরে আছে হালকা সবুজ রঙের কৃষি জমি, তামাটে রঙে দেখা যাচ্ছে শহর এবং নদীগুলো নীল রঙের।

পুরো পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ তিনটি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের একটি হিসেবে গঙ্গা অববাহিকায় অবস্থিত সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান যথেষ্ট জটিল। দুই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ এবং ভারত জুড়ে বিস্তৃত সুন্দরবনের বৃহত্তর অংশটি (৬৬%) বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর; পূর্বে বলেশ্বর নদী আর উত্তরে বেশি চাষ ঘনত্বের জমি বরাবর সীমানা। উঁচু এলাকায় নদীর প্রধান শাখাগুলো ছাড়া অন্যান্য জলধারাগুলো সর্বত্রই বেড়িবাঁধ ও নিচু জমি দ্বারা বহুলাংশে বাঁধাপ্রাপ্ত। প্রকৃতপক্ষে সুন্দরবনের আয়তন হওয়ার কথা ছিল প্রায় ১৬,৭০০ বর্গ কি.মি. (২০০ বছর আগের হিসাবে)। কমতে কমতে এর বর্তমান আয়তন হয়েছে পূর্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের সমান। বর্তমানে মোট ভূমির আয়তন ৪,১৪৩ বর্গ কি.মি. (বালুতট ৪২ বর্গ কি.মি.-এর আয়তনসহ) এবং নদী, খাঁড়ি ও খালসহ বাকি জলধারার আয়তন ১,৮৭৪ বর্গ কি.মি.। সুন্দরবনের নদীগুলো নোনা পানি ও মিঠা পানি মিলন স্থান। সুতরাং গঙ্গা থেকে আসা নদীর মিঠা পানির, বঙ্গোপসাগরের নোনা পানি হয়ে ওঠার মধ্যবর্তী স্থান হলো এ এলাকাটি। এটি বাংলাদেশে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট ও পশ্চিমবঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা জুড়ে রয়েছে। বাংলাদেশে দক্ষিণ পশ্চিমে ও ভারতে দক্ষিণ পূর্বে সুন্দরবন অবস্থিত।

হাজার বছর ধরে বঙ্গোপসাগর বরাবর আন্তঃস্রোতীয় প্রবাহের দরুন প্রাকৃতিকভাবে উপরিস্রোত থেকে পৃথক হওয়া পলি সঞ্চিত হয়ে গড়ে উঠেছে সুন্দরবন। এর ভৌগোলিক গঠন ব-দ্বীপীয়, যার উপরিতলে রয়েছে অসংখ্য জলধারা এবং জলতলে ছড়িয়ে আছে মাটির দেয়াল ও কাদা চর। এতে আরো রয়েছে সমুদ্র সমতলের গড় উচ্চতার চেয়ে উঁচুতে থাকা প্রান্তীয় তৃণভূমি, বালুতট এবং দ্বীপ, যেগুলো জুড়ে জালের মত জড়িয়ে আছে খাল, জলতলের মাটির দেয়াল, আদি ব-দ্বীপীয় কাদা ও সঞ্চিত পলি। সমুদ্রসমতল থেকে সুন্দরবনের উচ্চতা স্থানভেদে ০.৯ মিটার থেকে ২.১১ মিটার[১৭]

জৈবিক উপাদানগুলো এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সামুদ্রিক বিষয়ের গঠন প্রক্রিয়া ও প্রাণী বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে। সৈকত, মোহনা, স্থায়ী ও ক্ষণস্থায়ী জলাভূমি, কাদা চর, খাঁড়ি, বালিয়াড়ি, মাটির স্তূপের মত বৈচিত্র্যময় অংশ গঠিত হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

[সম্পাদনা]
সুন্দরবনের দীর্ঘ কাদা চর

উপকূল বরাবর সুন্দরবনের গঠন প্রকৃতি বহুমাত্রিক উপাদানসমূহ দ্বারা প্রভাবিত, যাদের মধ্যে রয়েছে স্রোতের গতি, ব্যষ্টিক ও সমষ্টিক স্রোত চক্র এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী দীর্ঘ সমুদ্রতটের স্রোত। বিভিন্ন মৌসুমে সমুদ্রতটের স্রোত যথেষ্ট পরিবর্তনশীল। এরা অনেক সময় ঘূর্ণীঝড়ের কারণেও পরিবর্তিত হয়।

এসবের মধ্য দিয়ে যে ক্ষয় ও সঞ্চয় হয়, যদিও এখনো সঠিকভাবে পরিমাপ করা সম্ভব হয়নি, তা ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তনে মাত্রাগত পার্থক্য তৈরি করে। অবশ্য ম্যানগ্রোভ বনটি নিজেই এর পুরো ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। প্রত্যেক মৌসুমী বৃষ্টিপাতের ঋতুতে বঙ্গীয় ব-দ্বীপের পুরোটিই পানিতে ডুবে যায়, যার অধিকাংশই ডুবে থাকে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় জুড়ে। অববাহিকার নিম্নানঞ্চলের পলি প্রাথমিকভাবে আসে মৌসুমী বৃষ্টিপাতকালীন সময় সমুদ্রের চরিত্র এবং ঘূর্ণিঝড়ের মত ঘটনাগুলোর ফলে। অনাগত বছরগুলোতে গঙ্গা অববাহিকায় বসবাসকারীদের সবচেয়ে বড় যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে তা হলো সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি।

উঁচু অঞ্চলে স্বাদুপানির গতিপথ পরিবর্তনের কারণে ভারতীয় ম্যানগ্রোভ আর্দ্রভূমিগুলোর অনেকগুলোতে স্বাদু পানির প্রবাহ ১৯ শতকের শেষের দিক থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে। একই সাথে নিও-টেকটনিক গতির কারণে বেঙ্গল বেসিনও পূর্বের দিকে সামান্য ঢালু হয়ে গিয়েছে, যার ফলে স্বাদু পানির বৃহত্তর অংশ চলে আসছে বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনে। ফলশ্রতিতে বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনে লবণাক্ততার পরিমাণ ভারতীয় অংশের তুলনায় অনেক কম। ১৯৯০ সালের এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, “হিমালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের অবনতি বা “গ্রিন হাউস” এর কারণে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতিকে আশঙ্কাজনক করে তুলেছে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদিও, ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে -“জলবায়ুর পরিবর্তন ও বিশ্ব ঐতিহ্যের পাঠ” শীর্ষক ইউনেস্কোর রিপোর্টে বলা হয়েছে যে মনুষ্যসৃষ্ট অন্যান্য কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের যে ৪৫ সে.মি. উচ্চতা বৃদ্ধি হয়েছে, তা সহ মনুষ্যসৃষ্ট আরও নানাবিধ কারণে সুন্দরবনের ৭৫ শতাংশ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে (জলবায়ু পরিবর্তনের উপর আলোচনায় প্রাকাশিত আন্তঃসরকার পরিষদের মত অনুযায়ী ২১ শতকের মধ্যেই)।[১৮]

সামুদ্রিক ঝড়ঝঞ্ঝার বিরুদ্ধে ম্যানগ্রোভের যে-অরণ্য সুন্দরবন-সহ দক্ষিণবঙ্গের প্রাকৃতিক প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তাকে বাঁচানোর যথেষ্ট উদ্যোগ না-থাকায় জাতীয় পরিবেশ আদালতও উদ্বিগ্ন।[১৯]

জীবমণ্ডল

[সম্পাদনা]

সুন্দরবনে দুই ধরনের জীবমন্ডলের অস্তিত্ব দেখা যায়: স্বাদুপানি জলাভূমির বনাঞ্চল এবং ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল।

স্বাদুজলের জলাভূমির বনাঞ্চল

[সম্পাদনা]

সুন্দরবনের স্বাদুজল জলাভূমির বনাঞ্চল বাংলাদেশের ক্রান্তীয় আর্দ্র-সপুষ্পক বনের অন্তর্গত। এধরনের বন নোনাজলযুক্ত জলাভূমির উদাহরণ। স্বাদুজলের জীবমন্ডলের জল সামান্য নোনা এবং বর্ষাকালে এই লবণাক্ততা কিছুটা হ্রাস পায়, বিশেষ করে যখন গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদের জলের কারণে নোনাজল দূর হয় এবং পলিমাটির পুরু আস্তরণ জমা হয়।

উদ্ভিদবৈচিত্র্য

[সম্পাদনা]
সুন্দরী গাছ
সুন্দরবনের বিখ্যাত গোলপাতা গাছ।
বেত গাছ

সুন্দরবনের প্রধান বনজ বৈচিত্রের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সুন্দরী, গেওয়া, ঝামটি গরান এবং কেওড়া। ১৯০৩ সালে প্রকাশিত প্রেইন এর হিসেব মতে সর্বমোট ২৪৫টি শ্রেণী এবং ৩৩৪টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে।।

সুন্দরবনের প্রধান গাছপালার মধ্যে অন্যতম সুন্দরী, গেওয়া, গড়ান, পশুর, বাইন, হেঁতাল, গোলপাতা, খামু, লতা সুন্দরী, কেওড়া, ধুন্দুল, আমুর, ছৈলা, ওড়া, কাঁকরা, সিংরা, ঝানা, খলশি ইত্যাদি। কিন্তু সুন্দরবনের নামের সমার্থক হিসেবে যে তরুটি জড়িয়ে আছে, সেটি সুন্দরীগাছ।

ব-দ্বীপিয় নয় এমন অন্যান্য উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বনভূমি এবং উচ্চভূমির বনাঞ্চলের তুলনায় বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বনভূমিতে উদ্ভিদ জীবনপ্রবাহের ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। পূর্ববর্তীটিরউদ্ভিদ জীবনচক্রের ভিন্নতা ব্যাখ্যা করা হয়েছে উত্তর-পূর্বে বিশুদ্ধ পানি ও নিম্ন লবণাক্ততার প্রভাব এবং পানি নিষ্কাশন ও পলি সঞ্চয়ের ভিত্তিতে।

সুন্দরবনকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে একটি আর্দ্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনভূমি হিসেবে যা গড়ে উঠেছে সুগঠিত সৈকতে কেওড়া (Sonneratia apetala) ও অন্যান্য সামুদ্র উপকূলবর্তী বৃক্ষ প্রধান বনাঞ্চলে। ঐতিহাসিকভাবে সুন্দরবনে প্রধান তিন প্রকারের উদ্ভিদ রয়েছে যাদের চিহ্ণিত করা হয়েছে পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা, স্বাদু পানি প্রবাহের মাত্রা ও ভূপ্রকৃতির মাত্রার সাথে সম্পর্কের গভীরতার উপর ভিত্তি করে।

অঞ্চল জুড়ে সুন্দরী ও গেওয়া এর প্রাধাণ্যের পাশাপাশি বিক্ষিপ্তভাবে রয়েছে ধুন্দল এবং কেওড়া। ঘাস ও গুল্মের মধ্যে শন, নল খাগড়া, গোলপাতা রয়েছে সুবিন্যস্তভাবে। কেওড়া নতুন তৈরি হওয়া পলিভূমিকে নির্দেশ করে এবং এই প্রজাতিটি বন্যপ্রাণীর জন্য জরুরি , বিশেষ করে চিত্রা হরিণের জন্য ।

প্রাণীবৈচিত্র্য

[সম্পাদনা]
সুন্দরবনের চিত্রা হরিণ
সুন্দরবনের একটি কুমির।
সুন্দরবনের কুমির খামারে চাষকৃত কুমির ছানা

সুন্দরবনে ব্যাপক প্রাণীবৈচিত্র্য বিদ্যমান। প্রাণীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা সুন্দরবনের কিছু কিছু এলাকায় শিকার নিষিদ্ধ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ অভয়ারণ্যের মত, যেখানে শর্তহীনভাবে বনজ সম্পদ সংগ্রহ করা যায়না এবং বন্য প্রাণীর জীবনে সামান্যই ব্যাঘাত ঘটে। যদিও এটা স্পষ্ট যে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের প্রাণী সম্পদ হ্রাস পেয়েছে[১৫] এবং সুন্দরবনও এর বাইরে নয় । তারপরও সুন্দরবন বেশ অনেকগুলি প্রাণীর প্রজাতি ও তাদের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রজাতিদের টিকিয়ে রেখেছে। এদের মধ্যে বাঘ ও শুশুককে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে প্রানীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা ও পর্যটন উন্নয়নের। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সম্পূর্ণ বিপরীত পরিবেশে থাকা এ দুইটির অবস্থা এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা সামগ্রিক প্রাণীবৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার শক্তিশালী সূচক। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের হিসেব মতে সুন্দরবন ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল যা পৃথিবীতে বাঘের একক বৃহত্তম অংশ।[২০]

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে বিচিত্র জীববৈচিত্র্যের আধার বাংলাদেশের সুন্দরবন বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ সর্বাধিক প্রচুর গাছের প্রজাতি হল সুন্দরী এবং গেওয়া। বনে ২৯০টি পাখি, ১২০টি মাছ, ৪২টি স্তন্যপায়ী, ৩৫টি সরীসৃপ এবং ৮টি উভচর প্রজাতিসহ ৪৫৯টি বন্যপ্রাণীর বাসস্থান রয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে বাংলাদেশের সুন্দরবনে বিভিন্ন প্রজাতির একটি বড় অংশ বিদ্যমান (যেমনঃ ৩০ শতাংশ সরীসৃপ, ৩৭ শতাংশ পাখি ও ৩৭ শতাংশ স্তন্যপায়ী) এবং এদের একটি বড় অংশ দেশের অন্যান্য অংশে বিরল।[২১] সরকারের মতে এই প্রানীবৈচিত্র্যের মধ্যে ২ প্রজাতির উভচর, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৫ প্রজাতির পাখি এবং ৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী বর্তমানে হুমকির মুখে ।

সুন্দরবনে একটি বাংলার বাঘ
চিত্রল হরিণ (Axis axis)
একটি রিসাস ম্যাকাক (Macaca mulatta)

সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান মৌলিক প্রকৃতির এবং যা বন্য প্রাণীর বিশাল আবসস্থল। বন্য প্রাণীর সংখ্যা এবং এর লালনক্ষেত্রের উপর মানুষের সম্পদ সংগ্রহ ও বন ব্যবস্থাপনার প্রভাব অনেক। কচ্ছপ (কেটো কচ্ছপBetagur baska, সুন্দি কাছিমLissemys punctata এবং ধুম তরুণাস্থি কাছিমTrionyx hurum), গিরগিটি (Varanus flavescensগুই সাপVaranus salvator), অজগর (Python molurus) এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগার (Panthera tigris tigris) সুন্দরবনের স্থানীয় প্রজাতিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এদের মধ্যে কিছু প্রজাতি সংরক্ষিত, বিশেষ করে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) (সংশোধিত) আইন, ১৯৭৪ (P.O. 23 of 1973) দ্বারা। বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ (Chital deer- Axis axis, Hog deer – Axis procinus ও Swamp deer – Cervus duvauceli), মহিষ (Bubalis bubalis), জাভাদেশীয় গণ্ডারRhiniceros sondaicusভারতীয় গণ্ডারRhinoceros unicornis) এবং স্বাদুপানির কুমিরের (Crocodylus palustris) মত কিছু কিছু প্রজাতি সুন্দরবনে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝির দিক থেকে।[২২]

সুন্দরবনে নানা প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। এগুলোর মধ্যে জলে রয়েছে কুমির, হাঙর প্রভৃতি। স্থলে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, বানর, সজারু, শেয়াল, নানা ধরনের পাখি, মৌমাছি, বন মোরগ ইত্যাদি

সুন্দরবন কুমির প্রজনন কেন্দ্রে একটি নোনা জলের কুমির
একটি বড় টুথ করাতমাছ
একটি কাদাঅধিনায়ক
একটি ধূসর মাথা বিশিষ্ট মাছের ঈগল
সুন্দরবনে নীল গ্রীবা মাছরাঙারও দেখা মিলে।

পাখি বিষয়ক পর্যবেক্ষণ, পাঠ ও গবেষণার ক্ষেত্রে পাখিবিজ্ঞানীদের জন্য সুন্দরবন এক স্বর্গ।[২৩] ইতোমধ্যে বহুপ্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে যার মধ্যে আছে বুনো মহিষ, পারা হরিণ, বুনো ষাঁড়, ছোট ও বড় এক শৃঙ্গি গণ্ডার, বার শিংগা, চিতা বাঘ। আরো লুপ্ত হয়েছে সাদা মানিক জোড়া কান ঠুনি, বোঁচা হাঁস, গগন বেড়, জলার তিতিরসহ বিভিন্ন পাখি।[২৪]

সুন্দরবনের বাঘ

[সম্পাদনা]

২০০৪ সালের হিসেব মতে, সুন্দরবন প্রায় ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাঘের আবাসস্থল যা বাঘের একক বৃহত্তম অংশ[২০]। এসব বাঘ উল্ল্যেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ, গড়ে প্রতি বছরে প্রায় ১০০ থেকে ২৫০ জন, মেরে ফেলার কারণে ব্যপকভাবে পরিচিত। মানুষের বাসস্থানের সীমানার কাছাকাছি থাকা একমাত্র বাঘ নয় এরা। বাঘের অভায়ারণ্যে চারপাশ ঘেরা বান্ধবগড়ে, মানুষের উপর এমন আক্রমণ বিরল। নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ায় ভারতীয় অংশের সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে একটিও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে বাংলাদেশের সুন্দরবনে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত কালপরিধিতে অর্ধাশতাধিকের বেশি বাঘ মানুষের হাতে মারা গেছে।[২৪]

স্থানীয় লোকজন ও সরকারীভাবে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বাঘের আক্রমণ ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। স্থানীয় জেলেরা বনদেবী বনবিবির প্রার্থণা ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে যাত্রা শুরুর আগে। সুন্দরবনে নিরাপদ বিচরণের জন্য প্রার্থণা করাও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে জরুরি। বাঘ যেহেতু সবসময় পেছন থেকে আক্রমণ করে সেহেতু জেলে এবং কাঠুরেরা মাথার পেছনে মুখোশ পরে। এ ব্যবস্থা স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করলেও পরে বাঘ এ কৌশল বুঝে ফেলে এবং আবারও আক্রমণ হতে থাকে। সরকারি কর্মকর্তারা আমেরিকান ফুটবল খেলোয়াড়দের প্যাডের মত শক্ত প্যাড পরেন যা গলার পেছনের অংশ ঢেকে রাখে। এ ব্যবস্থা করা হয় শিরদাঁড়ায় বাঘের কামড় প্রতিরোধ করার জন্য যা তাদের পছন্দের আক্রমণ কৌশল।

মৎস্য সম্পদ

[সম্পাদনা]
সুন্দরবনের অধিবাসীদের অন্যতম জীবিকা নদীতে মাছধরা।

সুন্দরবনের সামগ্রিক মাছের ওপর পূর্বাপর কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি। ফলে মাছের বর্তমান অবস্থা, বিলুপ্ত মাছ, বিলুপ্তপ্রায় মাছের ওপর উপাত্তনির্ভর তথ্য পাওয়া যায় না।শুধু, মানুষ যেসব মাছ খায় এবং যেসব মাছ রপ্তানি উপযোগী, সেসব মাছ চিহ্নিত করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, সুন্দরবনে শিরদাঁড়াওয়ালা মাছ রয়েছে প্রায় ৩০০ প্রজাতির। সাইডেনস্টিকার ও হাই-এর (পরিপ্রেক্ষিত ১৯৭৮) মতে, এর মধ্যে বাণিজ্যিক মাছ ১২০ প্রজাতির; অবশ্য বার্নাকসেকের মতে, (২০০০) বাণিজ্যিক মাছ ৮৪ প্রজাতির, কাঁকড়া-চিংড়ি ১২ প্রজাতির ও ৯ প্রজাতির শামুক রয়েছে।

সুন্দরবনে মৎস্যসম্পদকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সব মাছ মিলিয়ে হয় সাদা মাছ, বাকিরা বাগদা, গলদা, কাঁকড়া।[] আশির দশকে চিংড়ির পোনা ধরা শুরু হওয়ার পর মাছের প্রাচুর্য হঠাৎ কমে যায়। একসময় স্থানীয় জনসাধারণের প্রাণিজ প্রোটিন ৮০ শতাংশ মেটাতো মাছ। এখন মাছ খাওয়ার সৌভাগ্য এলাকার খুব কম লোকের ভাগ্যে জোটে। সুন্দরবনে কালা হাঙর, ইলশা কামট, ঠুঁটি কামট, কানুয়া কামট পাওয়া যায়। আগে এদের খালিশপুর এলাকা পর্যন্ত পাওয়া যেতো, এখন (২০১০) অনেক দক্ষিণে সরে গেছে। পশ্চিম সুন্দরবনে এদের উৎপাত বেশি। এরা সংখ্যায় অনেক কমে গেছে, বিশেষ করে কালা হাঙর প্রায় দেখাই যায় না। ৯ প্রজাতির শাঁকজ বা শাপলাপাতা মাছের অধিকাংশই এখন (২০১০) সুন্দরবনের খাঁড়ি এলাকায় দেখা যায় না।[]

কুঁচে কা কামিলা-জাতীয় মাছের পাঁচটি প্রজাতির সাগর কুইচ্চা ও ধানি কুইচ্চার অবস্থা খুবই খারাপ। আগের দিনে বাম মাছের মতো দেখতে এই মাছগুলো স্থানীয় লোকজন খেত না। এখনো খায় না। তবে হাজার হাজার কাঁকড়া মারা জেলে কুইচ্চা মাছের টুকরো কাঁকড়া ধরার টোপ হিসেবে ব্যবহার করে। শীতকালে সাগরপারের জঙ্গলি খালে পূর্ণ জোয়ারের প্রায় স্বচ্ছ জলে আর্চার ফিশ বা তীরন্দাজ মাছ দেখা যেতো। তিতপুঁটি মাছ আকারের এই মাছগুলো জলের এক-দেড় ফুট ওপরে গাছের পাতা বা ডালে পিঁপড়ে কিংবা মধ্যম আকৃতির বিভিন্ন পতঙ্গ দেখে পিচকারীর মতো তীব্র জল ছিটিয়ে পোকাটিকে ভিজিয়ে জলে ফেলে খেয়ে নেয়। এই মাছ পূর্ণবয়সকালে ফুটখানেক লম্বা হয়। এই মাছগুলো আজকাল আর দেখি না। একসময় জাভা মাছের খুব নাম শোনা যেতো, এরা ৫৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এখন (২০১০) দেখা পাওয়া ভার। পায়রাতলী বা চিত্রার মতো অত্যন্ত সুস্বাদু মাছ আজকাল জেলেদের জালে খুব কম পড়ছে।[]

সুন্দরবনের সবচেয়ে পরিচিত মাছ পারশে মাছ। ১৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা এ মাছটি জঙ্গলের সর্বত্র প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেতো। এখনো পাওয়া যায় খুব কম। পারশেরই জাতভাই বাটা ভাঙান। ভাঙান, গুল বাটা, খরুল ভাঙান আজকাল খুব কম ধরা পড়ে। খরশুলা বা খল্লা অত্যন্ত সুস্বাদু মাছ; বনের নদী-খালে এদের তেমন আর দেখতে পাওয়া যায় না।[]

সুন্দরবনের কাইক্কা বা কাইকশেল মাছ স্বাদু পানির কাইক্কার চেয়ে আকারে অনেক বড় হয়। এখানকার এই ঠুঁটি কাইকশেল এখন (২০১০) খুব কম ধরা পড়ে। বিশাল আকৃতির মেদ মাছের দুটি প্রজাতি এখন বিলুপ্তপ্রায়।[]

মারাত্মক মাছ কান মাগুর-এর পাশের কাঁটায় মারাত্মক বিষ রয়েছে। বড় কান মাগুর এখনো (২০১০) কিছু পাওয়া গেলেও দাগি কান মাগুর এখন বিলুপ্তপ্রায়। ট্যাংরা জাতের গুলশা ট্যাংরা, নোনা ট্যাংরা এখনো কিছু পাওয়া গেলেও বিশাল আকৃতির শিলং মাছ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে এসেছে। কাজলী মাছও সহসা চোখে পড়ে না। অপূর্ব সুন্দর ভোল মাছ। সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় মাছ কই ভোল এখন ধরা পড়ে কালেভদ্রে। আগে সুন্দরবনের খালে কুৎসিত দর্শন গনগইন্যা মাছ বড়শিতে ধরা পড়তো এখন (২০১০) তেমন একটা পাওয়াও যায় না। রেখা মাছ একসময় বেশ দেখা যেতো, ইদানীং দেখা পাওয়া যায় না।[]

গুটি দাতিনা এখনো (২০১০) পাওয়া গেলেও লাল দাতিনা একেবারেই বিরল হয়ে গেছে। সুন্দরবনের নদী-খাঁড়িতে মাঝ ভাটায় অত্যন্ত সুস্বাদু লাক্ষা মাছ (স্থানী নাম তাড়িয়াল মাছ: Indian Salmon) দারুণ আলোড়ন তুলে ছোট, মাঝারি পারশে, দাতিনা মাছ তাড়িয়ে বেড়ায়। এরা আকারে প্রায় চার ফুট লম্বা হয়। এদের মতোই তপসে মাছের (স্থানীয় নাম রামশোষ) আকাল দেখা দিয়েছে (২০১০)। জেলেরা অন্তত পাঁচ প্রজাতি চেউয়া মাছ ধরে বড় নদীতে। এর মধ্যে লাল চেউয়া বিপন্ন হয়ে উঠেছে। সুন্দরবন তথা পৃথিবীর সব ক্রান্তীয় ম্যানগ্রোভ বনের প্রতীক মাছ হলো মেনো মাছ (Mud Skipper), কোথাও ডাহুক মাছ নামেও পরিচিত। বনে এদের পাঁচটি প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়। প্রজাতিভেদে এরা ৯ থেকে ২২ সেন্টিমিটার লম্বা হয়।[]

বনের বলেশ্বর, কুঙ্গা নদীতে যথেষ্ট ইলিশ ধরা পড়ে। দুই প্রজাতির ইলিশের মধ্যে চন্দনা ইলিশ কম পাওয়া যায় (২০১০)। ৪ প্রজাতির ফ্যাসা মাছের মধ্যে রাম ফ্যাসা কম পাওয়া যায় (২০১০)। বৈরাগী মাছের সংখ্যাও কমেছে। সুন্দরবনের ভেতর পোড়ামহল, আন্ধারমানিক, জোংরা, শুবদি-গুবদি এলাকার মাঝারি আকারের বিলগুলোতে বর্ষায় পানি আটকে যায়, কোথাও জোয়ারের পানি ঢোকে। এই বিলগুলোর পানি মিঠা, এখানে মিঠাপানির মাছ পাওয়া যায়। বেশির ভাগ জিওল মাছ। কই, শিং, মাগুর, দুই প্রজাতির টাকি, শোল ছাড়াও ছোট টেংরা, পুঁটি, খলসে, চ্যালা, দাঁড়কিনা, কুঁচো চিংড়িসহ নানা মাছ পাওয়া যায়। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে এসব বিলে লোনা পানি ঢুকছে। এই বিলগুলোর মাছ তাই শেষ হওয়ার দিন গুনছে।[]

সুন্দরবনে বর্তমানে (২০১০) ১৩ ধরনের পদ্ধতিতে মাছ ধরা হয়। ঠেলা জাল, রকেট জালের ছিদ্র খুব ছোট হওয়ায় চারা মাছ এবং মাছের ডিম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।তবে বিষ প্রয়োগে মাছ মারায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়।[]

অর্থনীতি

[সম্পাদনা]
সুন্দরবনের মাছ ধরার নৌকা
সুন্দরবনে গাছ কাটার নৌকা

সুন্দরবনের জনসংখ্যা ৪ মিলিয়নের বেশি[২৫] কিন্তু এর বেশির ভাগই স্থায়ী জনসংখ্যা নয়।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিতে যেমন, ঠিক তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতেও সুন্দরবনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এটি দেশের বনজ সম্পদের একক বৃহত্তম উৎস। এই বন কাঠের উপর নির্ভরশীল শিল্পে কাঁচামাল জোগান দেয়। এছাড়াও কাঠ, জ্বালানী ও মন্ডের মত প্রথাগত বনজ সম্পদের পাশাপাশি এ বন থেকে নিয়মিত ব্যাপকভাবে আহরণ করা হয় ঘর ছাওয়ার পাতা, মধু, মৌচাকের মোম, মাছ, কাঁকড়া এবং শামুক-ঝিনুক। বৃক্ষপূর্ণ সুন্দরবনের এই ভূমি একই সাথে প্রয়োজনীয় আবাসস্থল, পুষ্টি উৎপাদক, পানি বিশুদ্ধকারক, পলি সঞ্চয়কারী, ঝড় প্রতিরোধক, উপকূল স্থিতিকারী, শক্তি সম্পদের আধার এবং পর্যটন কেন্দ্র।

এই বন প্রচুর প্রতিরোধমূলক ও উৎপাদনমূলক ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৫১ শতাংশ জুড়ে সুন্দরবনের, বন থেকে আসা মোট আয়ে অবদান প্রায় ৪১ শতাংশ এবং কাঠ ও জ্বালানী উৎপাদনে অবদান প্রায় ৪৫ শতাংশ (বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, ১৯৯৫)। অনেকগুলি শিল্প (যেমনঃ নিউজপ্রিন্ট, দিয়াশলাই, হার্ডবোর্ড, নৌকা, আসবাবপত্র) সুন্দরবন থেকে আহরিত কাঁচামালের উপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন অ-কাঠজাত সম্পদ এবং বনায়ণ কমপক্ষে আধা মিলিয়ন উপকূলবর্তী জনসংখ্যার জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। উৎপাদনমূখী ভূমিকার পাশাপাশি সুন্দরবন, ঘূর্ণিঝড়প্রবণ বাংলাদেশের উপকূলবর্তী জনসংখ্যা ও তাদের সম্পদের প্রাকৃতিক নিরাপত্তাবলয় হিসেবে ভূমিকা রাখে।

মানুষের বসবাস ও অর্থনৈতিক কাজে ব্যাপক ব্যবহার হওয়া সত্ত্বেও এখনো সুন্দরবনের ৭০ শতাংশের কাছাকাছি পরিমাণ বনভূমি টিকে আছে, ১৯৮৫ সালে এমন মত জানায় যুক্তরাজ্যের ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট এডমিনিস্ট্রেশন (ও ডি এ)।

১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যে বনজ সম্পদের স্থিতির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে প্রধানত দুইটি ম্যানগ্রোভ প্রজাতির ক্ষেত্রে - সুন্দরী এবং গেওয়া। এই হ্রাসের পরিমাণ যথাক্রমে ৪০ শতাংশ ও ৪৫ শতাংশ (ফরেস্টাল ১৯৬০ এবং ও ডি এ ১৯৮৫)। তাছাড়া, মাছ ও কিছু অমেরুদন্ডী প্রাণী ব্যতীত অন্যান্য বন্যপশু শিকারের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সেখানে জীব বৈচিত্র্য হ্রাসের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে (এ শতকে উল্লেখযোগ্য হল কমপক্ষে ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও ১ প্রজাতির সরীসৃপ) এবং ফলশ্রুতিতে বাস্তুসংস্থানের মান হ্রাস পাচ্ছে (আই ইউ সি এন ১৯৯৪)।

বাংলাদেশের অভয়ারণ্য

[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ৬,৫১৭ বর্গ কি.মি.। এর মধ্যে নদী, খাল ও খাঁড়ি রয়েছে প্রায় ১,৮০০ বর্গ কি.মি. যাদের প্রশস্ততা কয়েক মিটার থেকে শুরু করে কয়েক কি.মি. পর্যন্ত। জালের মত পরস্পর যুক্ত নৌপথের কারণে সুন্দরবনের প্রায় সব জায়গাতেই সহজে নৌকায় করে যাওয়া যায়। সুন্দরবনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ২টি বনবিভাগ, ৪টি প্রশাসনিক রেঞ্জ - চাঁদপাই, শরণখোলা, খুলনা ও বুড়িগোয়ালিনি এবং ১৬টি বন স্টেশন। বনটি আবার ৫৫ কম্পার্টমেন্ট এবং ৯টি ব্লকে বিভক্ত।[] ১৯৯৩ সালে নতুন করে খুলনা বন সার্কেল গঠন করা হয়েছে বন সংরক্ষণের জন্য এবং তাতে একটি সংরক্ষক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বনবিভাগের প্রশাসনিক প্রধাণের পদটি খুলনাকেন্দ্রিক। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অধীনে রয়েছে বহুসংখ্যক পেশাদার, অপেশাদার ও সহায়ক জনবল। ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রীয় একক হল কম্পার্টমেন্ট। চারটি বন রেঞ্জের অধীনে থাকা ৫৫টি কম্পার্টমেন্ট স্পস্টতই নদী, খাল, খাঁড়ির মত প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট অনুযায়ী বিভক্ত।

১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, ১৯৭৩ (P.O. 23 of 1973) অনুযায়ী বাংলাদেশে তিনটি অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।[২৪] এগুলো হলো:

  • সুন্দরবন পূর্ব বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য: আয়তন প্রায় ৩১,২২৭ হেক্টর। মিঠাপানি ও সুন্দরী গাছের (Heritiera fomes) প্রাধাণ্যের সাথে সাথে গেওয়া (Excoecaria agallocha), প ও কেওড়া (Bruguiera gymnorrhiza) রয়েছে বন্যাপ্রবণ এলাকাটি জুড়ে। সিংড়া (Cynometra ramiflora) হয় অপেক্ষাকৃত শুষ্ক মাটিতে, আমুর (Amoora cucullata) হয় জলপ্রধাণ এলাকায়, গরান (Ceriops decandra) হয় নোনা এলাকায় এবং গোল পাতা (Nypa fruticans) জলধারা বরাবর হয়।
  • সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য: বিস্তৃত ৩৬,৯৭০ হেক্টর এলাকা জুড়ে। এলাকাটিতে লবণাক্ততার বিশাল মৌসুমী তারতম্যের প্রমাণ রয়েছে। তুলনামূলকভাবে দীর্ঘকালীন লবণাক্ততাপ্রবণ এলাকাটির প্রধান বৃক্ষ প্রজাতির মধ্যে রয়েছে গেওয়া। এটি প্রায়ই সেসব স্থানে জন্মায় যেখানে সুন্দরী অত সফলভাবে বংশ বিস্তার করতে পারে না।
  • সুন্দরবন পশ্চিম বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য: ৭১,৫০২ হেক্টর এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এ এলাকার তুলনামূলকভাবে শুষ্ক ভূমি ও নদীর তীরে গেওয়া, গরান ও হেন্তাল জন্মে।

বাংলাদেশে সুন্দরবনের দস্যুতার অবসান

[সম্পাদনা]

সুন্দরবনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বিভিন্ন পেশাজীবী সম্প্রদায়ের মানুষ ও উপকূলীয় অধিবাসীদের জন্য বিশেষত বাংলাদেশ অংশে সবথেকে বড় আতঙ্কের বিষয় ছিল বনদস্যুদের উৎপাত,ডাকাতি ও অপহরণ। এ উৎপাত ঠেকাতে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, র‌্যাব, পুলিশ ও বন বিভাগের প্রহরীদের সক্রিয় প্রচেষ্টা থাকলেও সমন্বিত উদ্যোগের অভাব ছিল। ২০১২ সালে র‌্যাব মহাপরিচালককে প্রধান করে সুন্দরবনের জলদস্যু দমনের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠিত হয়। অবশেষে সাংবাদিক মোহসীন-উল-হাকীমের মধ্যস্থতায় ২০১৬ সালের ৩১ মে মাস্টার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সুন্দরবনের দস্যুমুক্তকরন শুরু হয় এবং ১ নভেম্বর ২০১৮ জলদস্যুদের সর্বশেষ ৬ টি বাহিনী আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সুন্দরবনের বাংলাদেশের অংশের প্রায় ৪০০ বছরের জলদস্যুতার অবসান ঘটে।[২৬][২৭]

জনপ্রিয় মাধ্যমে সুন্দরবনের উপস্থিতি

[সম্পাদনা]

সাহিত্যে সুন্দরবন

[সম্পাদনা]
  • ২০০৪ সালে প্রকাশিত পুরস্কার বিজয়ী নৃতাত্ত্বিক অমিতাভ ঘোষের “দ্যা হাঙ্গরি টাইড” উপন্যাসের অধিকাংশ কাহিনী সুন্দরবনকেন্দ্রিক।
  • সালমান রুশদির বুকার পুরস্কার বিজয়ী উপন্যাস “মিডনাইটস চিলড্রেন” এর কাহিনীর অংশ বিশেষও সুন্দরবনকেন্দ্রিক।
  • সুন্দরবনে সাত বৎসর প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বারা সমাপ্ত একটি রোমাঞ্চকর উপন্যাস। বিভূতিভূষণের মৃত্যুর দুই বছর পর অর্থাৎ ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে এটি প্রথম বইয়ের আকারে প্রকাশিত হয়।
  • বাংলাদেশী কথাসাহিত্য ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক, কলাম লেখক, পদার্থবিদ, শিক্ষাবিদ এবং আন্দোলনকর্মী মুহাম্মদ জাফর ইকবালের রচিত এবং ২০১২ সালে প্রকাশিত কিশোর উপন্যাস "রাতুলের দিন রাতুলের রাত" সম্পূর্ণই সুন্দরবন ভ্রমণকে কেন্দ্র করে লেখা।

গণমাধ্যমে সুন্দরবন

[সম্পাদনা]

বিপন্ন ও বিলুপ্ত প্রজাতি

[সম্পাদনা]
সুন্দরবনের বিলুপ্ত Javan rhinoceros, ১৮৭৭ সালের চিত্রাঙ্কন থেকে
গঙ্গা ডলফিন, ১৮৯৪ সালের চিত্রাঙ্কন থেকে

বনের অনুসন্ধানগুলি প্রকাশ করে যে দুটি প্রধান বাণিজ্যিক ম্যানগ্রোভ প্রজাতি - সুন্দরী ( হেরিটিরা এসপিপি) এবং গেওয়া ( এক্সোইকারিয়া আগালোচা ) - ১৯৫৯ এবং ১৯৮৩ সালের মধ্যে যথাক্রমে ৪০% এবং ৪৫% হ্রাস পেয়েছে । মাছ এবং কিছু অমেরুদণ্ডী প্রাণী ব্যতীত সমস্ত বন্যপ্রাণী হত্যা বা ধরার উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, এটি প্রতীয়মান হয় যে বিংশ শতাব্দীতে ধ্বংস হওয়া জীববৈচিত্র্য বা প্রজাতির (কমপক্ষে ছয়টি স্তন্যপায়ী এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ সরীসৃপ) একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ প্যাটার্ন রয়েছে এবং সেটা হচ্ছে "মূল ম্যানগ্রোভ বনের পরিবেশগত গুণমান হ্রাস পাচ্ছে"। [১৫]

সুন্দরবনের মধ্যে বসবাসকারী বিপন্ন প্রজাতি এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মধ্যে রয়েছে বেঙ্গল টাইগার, মোহনা কুমির, উত্তর নদী টেরাপিন ( বাটাগুর বাসকা ), অলিভ রিডলি সামুদ্রিক কচ্ছপ, গঙ্গা ডলফিন, স্থল কচ্ছপ, হকসবিল সামুদ্রিক কচ্ছপ এবং রাজকীয় কাঁকড়া । সুন্দরবনে বিশ্বব্যাপী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিপন্ন জীব ধারণ করে যা মধ্যে কালোমুখ প্যারাপাখি রয়েছে এবং এটি চামচঠুঁটো বাটান এবং দেশি গাঙচষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ শীতকালীন স্থান। [২৮] কিছু প্রজাতি যেমন হগ হরিণ ( অ্যাক্সিস পোর্সিনাস ), জল মহিষ ( বুবালাস বুবালিস ), বারসিংহ বা জলা হরিণ ( সারভাস ডুভাউসেলি ), জাভান গণ্ডার ( গণ্ডার সোন্ডাইকাস ), ভারতীয় গণ্ডার ( রাইনোসেরোস ইউনিকর্নিস ) এবং স্বাদুপানির কুমির থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতি ব্রিটিশ ও স্থানীয়দের ব্যাপক চোরাচালান ও শিকারের কারণে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সুন্দরবন থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। [২২] অন্যান্য বিপন্ন স্তন্যপায়ী প্রজাতি রয়েছে, যেমন মুখপোড়া হনুমান ( সেমনোপিথেকাস পাইলিয়াটাস ), মসৃণ প্রলিপ্ত উটর ( লুট্রোগেল পারসপিসিলাটা ), এশীয় উদবিলাই ( অনিক্স সিনেরিয়া ) এবং বড় বাঘডাশ ( ভিভেরা জিবেথা )।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Ramsar List"। Ramsar.org। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৩ 
  2. Pani, D. R.; Sarangi, S. K.; Subudhi, H. N.; Misra, R. C.; Bhandari, D. C. (2013). "Exploration, evaluation and conservation of salt tolerant rice genetic resources from Sundarbans region of West Bengal" (PDF). Journal of the Indian Society of Coastal Agricultural Research. 30 (1): 45–53.
  3. নিয়াজ আহমদ সিদ্দিকী (২০১২)। "সুন্দরবন"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  4. খসরু চৌধুরী (২৩ জুলাই ২০১০)। "সুন্দরবনের হারানো মাছ" (ওয়েব)দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা। পৃষ্ঠা ২৫। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২৪, ২০১০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "Sundarbans Tiger Project"। ২০ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০০৮ 
  6. "Monitoring mangrove forest dynamics of the Sundarbans in Bangladesh and India using multi-temporal satellite data from 1973 to 2000"Estuarine, Coastal and Shelf Science (ইংরেজি ভাষায়)। 73 (1-2): 91–100। ২০০৭-০৬-০১। আইএসএসএন 0272-7714ডিওআই:10.1016/j.ecss.2006.12.019 
  7. "Indian Sundarbans mangrove forest considered endangered under Red List of Ecosystems, but there is cause for optimism"Biological Conservation (ইংরেজি ভাষায়)। 251: 108751। ২০২০-১১-০১। আইএসএসএন 0006-3207ডিওআই:10.1016/j.biocon.2020.108751 
  8. Iftekhar, M.S.; Islam, M.R. (২০০৪)। "Managing mangroves in Bangladesh: A strategy analysis"Journal of Coastal Conservation10 (1): 139। আইএসএসএন 1400-0350ডিওআই:10.1652/1400-0350(2004)010[0139:mmibas]2.0.co;2 
  9. Manna, Suman; Chaudhuri, Kaberi; Bhattacharyya, Somenath; Bhattacharyya, Maitree (২০১০-০৮-১১)। "Dynamics of Sundarban estuarine ecosystem: eutrophication induced threat to mangroves"Saline Systems6 (1): 8। আইএসএসএন 1746-1448ডিওআই:10.1186/1746-1448-6-8পিএমআইডি 20699005পিএমসি 2928246অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  10. May 25, PTI /; 2009; Ist, 22:38। "23 dead, 1 lakh affected as Cyclone Aila hits Bengal | India News - Times of India"The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-১৭ 
  11. "Cyclone Aila"earthobservatory.nasa.gov (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৯-০৫-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-১৭ 
  12. "Unesco calls for shelving Rampal project"web.archive.org। ২০১৬-০৯-২৬। Archived from the original on ২০১৬-০৯-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-১৭ 
  13. Biswas, S. (২০০০)। "সুন্দর"সামসাদ বাংলা-ইংরেজি অভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সামসাদ। পৃষ্ঠা ১০১৭। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  14. Biswas, S. (২০০০)। "বন"সামসাদ বাংলা-ইংরেজি অভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সামসাদ। পৃষ্ঠা ৭১৭। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  15. Hussain, Z. and G. Acharya, 1994. (Eds.) Mangroves of the Sundarbans. Volume two : Bangladesh. IUCN, Bangkok, Thailand. 257 p. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "hussain" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  16. UNDP, 1998. Integrated resource development of the Sundarbans Reserved Forests, Bangladesh. Volume I Project BGD/84/056, United Nations Development Programme, Food and Agriculture Organization of the United Nations, Dhaka, The People’s Republic of Bangladesh. 323 p.
  17. Katebi, M.N.A. and M.G. Habib, 1987. Sundarbans and Forestry in Coastal Area Resource Development and Management Part II, BRAC Printers, Dhaka, Bangladesh. 107 p.
  18. Case Studies of Climate Change, UNESCO, 2007
  19. "কেমন আছে ম্যানগ্রোভ, উপগ্রহ-চিত্র চায় আদালত"। ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  20. "www.bforest.gov.bd/highlights.php"। ৭ ডিসেম্বর ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০০৮ 
  21. Scott, D.A. 1991. Asia and the Middle East Wetlands. M. Finlayson and M. Moser (eds.). Oxford: 151-178.
  22. Sarker, S.U. 1993. Ecology of Wildlife UNDP/FAO/BGD/85/011. Field Document N. 50 Institute of Forestry and Environmental Sciences. Chittagong, Bangladesh. 251 p. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "sarakar" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  23. Habib, M.G. 1999. Message In: Nuruzzaman, M., I.U. Ahmed and H. Banik (eds.). The Sundarbans world heritage site: an introduction, Forest Department, Ministry of Environment and Forest, Government of the People’s Republic of Bangladesh. 12 p.
  24. "সুন্দরবনের পশু শিকারের মহোৎসব"। ১৫ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ এপ্রিল ২০১৪ 
  25. Subir Bhaumik, Fears rise for sinking Sundarbans, BBC News, 2003-09-15
  26. প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০১৬-০৫-৩১)। "সুন্দরবনের জলদস্যু 'মাস্টার বাহিনী'র আত্মসমর্পণ"প্রথম আলো। ২০২১-০৫-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-০৩ 
  27. খান, মাসুদ হাসান (২০১৭-০৯-১৩)। "সুন্দরবন দখল যাদের নিত্যদিনের লড়াই"বিবিসি বাংলা। ২০২১-০৫-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-০৩ 
  28. "BirdLife Data Zone"। ২ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০২২ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

উইকিভ্রমণ থেকে সুন্দরবন ভ্রমণ নির্দেশিকা পড়ুন।