বাবার চাকরির বদলির সুবাদে সম্পূর্ণ অচেনা পরিবেশে এসে হাজির হয় তমাল। বদলে যায় চেনা পরিবেশ, বন্ধু সব। একাকীত্ব কাটাতে বাধ্য হয়ে গ্রামের ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করে সে। তারপর দেখে, এই ছেলেমেয়েগুলোকে যতটা অপদার্থ সে মনে করেছিল, আসলে ব্যাপারটা সেরকম নয়। আস্তে আস্তে ওদের কাছাকাছি আসে সে এবং কৈশোরের অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ নেয়া শুরু করে। তারপর পৃথিবীর এক আদি সমস্যা দেখা দেয় মির্জাপুরে। আবার দেবতাদের বিরোধের নিস্পত্তি হবে এই পৃথিবীতে। তা হোক, কিন্তু, প্রতিবারের মত এবারও পৃথিবীর অস্তিত্ব সঙ্কটাপন্ন। আর এমন পরিস্থিতিতে কিছু মানুষকে বরাবরই অতিমানব হয়ে উঠতে হয়েছে।
বিশ্ব-মনের সোনার স্বপনে কিশোর তনু বেড়ায় ওই তন্দ্রা ঘোরে অন্ধ আঁখি নিখিল খোঁজে কই সে কই। বাজিয়ে বাঁশি চড়ায় উট, নিরুদ্দেশে দেয় সে ছুট, ‘হেরার’ গুহায় লুকিয়ে ভাবে – এ আমি তো আমি নই!
— কাজী নজরুল ইসলাম
হঠাৎই জায়গা বদলের ফলে সহজে মানিয়ে নেওয়া সহজ হয় না। তাও যদি হয় শহুরে আপডেটেড এক কিশোর তাহলে তো আরও মুশকিল। এমনটাই হয়েছে তমালের সাথে। বাবার বদলির জন্য মির্জাপুরে এসে মনমরা হয়ে গেছে। না আছে ফাস্টফুড, না আছে টিভি। কারেন্টের সাথে পরিচয়ই তো হয়েছে মির্জাপুরবাসীর কিছুদিন আগে। গ্রাম জুড়ে হৈ-হুল্লোড় পড়ে যায়, ছোটনের ছোট বোন পানিতে পড়ে গেছে! তমালের জন্য বেঁচে যায় একটি প্রাণ; সাথে শুরু হয় তমালের সাথে ছোটন, মিলি, সুজনদের বন্ধুত্বের পথচলা। শহুরে বাবু বনে যায় গ্রাম্য দুরন্ত কিশোর! সারাদিন স্কুল, ছোটাছুটি, ঘুড়ি উড়ানো, খেলাধুলা, দীঘিতে ঝাঁপাঝাপি...
নির্জন শান্ত মির্জাপুরে রূপ বদলে ঢুকে পড়ে তিন আগন্তুক। তারপর? শুরু হয় মৃত্যুর তান্ডব! প্রাণবন্ত কিশোরদলের ঘাড়ে পড়ে প্রাণ রক্ষার দায়িত্ব। পারবে কি তমালরা ভয়ানক মৃত্যুখেলা রুখতে?
একটুখানি মিথ, একটুখানি অ্যাডভেঞ্চার, একটুখানি মিস্ট্রি, একটুখানি থ্রিল মিলেমিশে ❝মির্জাপুরে মহাতঙ্ক❞। অবশ্য কিশোর উপযোগী। গ্রিক দেবতার সাথে বিরোধ মানুষ্যজাতির সাথে নবীদের অল্প কিছু ঘটনা। কাহিনীর প্রথম অর্ধাংশ তমালের পরিবর্তন আর গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে কৈশোরের দূরন্তপনার দৃশ্য ফুটে উঠেছে। প্রথমে ধীর গতির হলেও শেষের দিকে ঘটনাগুলো দ্রুত ঘটতে থাকে। থ্রিল বা মিস্ট্রি খুব একটা টুইস্টেড না। এত সহজেই সমাধান হয়ে গেছে দেখে কিছুটা হতাশ হয়েছি। তবে কিশোর উপন্যাস হিসেবে মন্দ নয়।
কিছু জায়গায় খটকা আছে। তমালের কথা শুনে কাউকে না জানিয়ে অচেনা একজনের লাশ কবর দিয়ে দিলো! সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া একদল কিশোর-কিশোরীর জন্য বেমানান ঠেকে। জীবনবৃক্ষ সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে জীবনেও মরবে না। তাহলে গাছটা আগেই কেন মাটিতে লাগানো হলো না? শেষ অংশ আরও কিছুটা ডিটেইলসে হলে ভালো হতো।
পড়ার সময় বারবার জাফর ইকবাল স্যারের কিশোর উপন্যাসের কথা মনে পড়ছিল। কৈশোরের দুঃসাহসিকতা, বন্ডিং, অ্যাডভেঞ্চার, সমস্যা যত বড়োই হোক না কেন সমাধান তো চাই-ই চাই। নস্টালজিক করে তোলে।
বাবার পোস্টিংয়ের কারণে ঢাকা থেকে মির্জাপুরে আসে তমালরা। নতুন পরিবেশ আর বন্ধুদের সাথে মানিয়ে নিতে একটু সমস্যা হয়। কিন্তু একদিন বিকালে একটা ঘটনার পর তাদের সাথে বন্ধুত্ব নিশ্চিত হয়ে যায়। শহুরে তমালের গ্রামের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়া আর দুরন্তপনা একসাথেই চলছিল। কিন্তু এক সকালে বন্ধু ছোটনদের গাই আর বাছুরকে কারা যেন নৃশংসভাবে মেরে ফেলে যায়। তারপর থেকেই ঘটনা বাঁক নেয় ভিন্ন দিকে।
এদিকে, দেবতা হার্মিস তার প্রধান কিপার হেবলকে দেন একটা গোপন কাজ। সেটা সম্পন্ন করতে পারলে পৃথিবী পরিণত হবে প্রাণহীন ম���ু গ্রহে। ঘটনাক্রমে তমালরা জড়িয়ে যায় পৃথিবী রক্ষার গোপন কিন্তু অবিশ্বাস্য এডভেঞ্চারে।
বইটার কাহিনী সংক্ষেপ আগে পড়া না থাকায় প্রারম্ভিকা পড়ে চমকে গিয়েছিলাম। গ্রিক মিথের সাথে সম্পর্ক থাকতে পারে ভাবিনি। কিন্তু ঘটনাটা হার্মিসকে দিয়ে শুরু হলেও এরপর বইয়ের পাঁচ ভাগের তিন ভাগই তমালের গ্রামীণ পরিবেশে মানিয়ে ওঠা আর কৈশোরের দুরন্ত এডভেঞ্চার যেমন: চালতা চুরি, দিঘীতে গোসল কিংবা ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে চলতে থাকে। গ্রামে না হলেও মফস্বলে বেড়ে ওঠায় ওই কয়েক অধ্যায়ের বর্ণনাগুলো পড়ে ঠিক মজা পাচ্ছিলাম না। এরপর হঠাৎ ঘটনা ভিন্ন দিকে বাঁক নিলে পরের ৪০ পৃষ্ঠা বেশ ভালো গতিতেই পড়া সম্ভব হয়েছে। শেষের ঘটনাগুলো এতোটাও চমকপ্রদ মনে হয়নি আমার কাছে। চরিত্রায়ণ মোটামুটি ছিল। তবে ছোট বই হওয়ায়ই হয়তো কোনো চরিত্রকে তেমন মনে ধরেনি।
দিবাকর দা’র তৃতীয় বই এটা সম্ভবত। লেখনশৈলী মোটামুটি ভালোই ছিল। তবে তার শক্তিশালী দর্শন এই বইতেও কিছুটা ফুটে উঠেছে। ভালো লেগেছে তা।
গ্রিক মিথের সাথে এদেশের কিশোরদের নিয়ে এরকম লেখা হয়তো হয়নি কিংবা হলেও ঠিক বলতে পারছি না। পার্সি জ্যাকসন যারা পড়েননি কিন্তু গ্রিক মিথ নিয়ে মোটামুটি ধারণা রাখেন, তারা পড়ে দেখতে পারেন।
তমাল ঢাকার একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র।ঢাকাতেই বেড়ে উঠা। কিন্তু বাবার চাকরির বদলির সুবাধে চলে যেতে হয় মির্জাপুর নামে একটি গ্রামে। প্রথমে গ্রামের অচেনা পরিবেশের সাথে কিছুতেই খাপ খাইয়ে উঠতে পারছিলো না তমাল।তবে আস্তে আস্তে নতুন বিষয়গুলোর সাথে পরিচিত হয় সে।বন্ধুত্ব ও হয়ে উঠে ছোটন,মিলি সহ ভিন্ন আচরনের কিছু ছেলে মেয়ের সাথে। তারপর থেকে আনন্দেই কাটতে থাকে তমাল ও তার বন্ধুদের দিনগুলো। কিন্তু হঠাৎ করে মির্জাপুরে নেমে আসে অশুভ এক অতিপ্রাকৃত শক্তি,যাদের লক্ষ্য পৃথিবী প্রানশূন্য করা।এ বিপদ থেকে কি রক্ষা পাবে কি পৃথিবী? জনতে হলে পড়তে হবে কিশোর অ্যাডভেঞ্চার “মির্জাপুরে মহাতঙ্ক’’।